শেখ হাসিনার বৈশ্বিক নেতৃত্ব

come to mukthi and learn the truth

বিশ্বশান্তি ও উন্নয়ন প্রসঙ্গ

‘দেশ ও বিশ্বপরিম-লে শেখ হাসিনা আজ গণতন্ত্র, উন্নয়ন, ন্যায়বিচার ও শান্তির প্রতীক। তারই নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতিসংঘে অনেকগুলো প্রস্তাব আনে, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানবকল্যাণ, টেকসই উন্নয়ন এবং সকল জাতিসত্তার অব্যাহত উন্নয়ন ও মুক্তি।’


ড. আব্দুল মোমেন: প্রাণঘাতী যুদ্ধ-বিগ্রহ আর অযুত মানুষের হত্যাযজ্ঞের ওপর দাঁড়িয়ে শান্তির অন্বেষায় ১৯৪৫ সালে যে বিশ্ব সংস্থাটির জন্ম, সেই জাতিসংঘ পরিপূর্ণারূপে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় সফল হয়েছে কি-না তা এখনও বিশ্বজুড়ে একটি আলোচ্য বিষয়। তবুও সাবেক মহাসচিব দ্যাগ হ্যামার্শ্যল্ড-এর ভাষায় বলতে হয়, ‘জাতিসংঘ আমাদের স্বর্গে নিতে না পারলেও নরক থেকে দূরে রাখতে সমর্থ হয়েছে।’ পৃথিবীর নানা অঞ্চলের সংঘাতপূর্ণ বিষয় ও সমস্যার ওপর আলোচনা, বিতর্ক ও সংলাপ যেমন জাতিসংঘ আয়োজন করে চলেছে, তেমনি সংস্থাটি অন্তত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এই পর্যন্ত ঠেকিয়ে রাখতে সমর্থ হয়েছেÑ এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। আশার কথা হচ্ছে, এই যে জাতিসংঘের নিরলস প্রয়াসের কারণেই আজ পৃথিবীতে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার কমেছে, প্রসূতি মায়েরা অধিক হারে সুস্থ সন্তানের জন্ম দিচ্ছে, লাখ লাখ শিশু স্কুলে যাচ্ছে এবং কোটি কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধার ভয়াল চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। তবে এই অর্জন সম্ভব হতো না, যদি বৈশ্বিক নেতৃত্বের গতিশীলতা, দৃঢ়সংকল্প ও প্রয়াস না থাকতÑ যারা স্ব-স্ব দেশের জনগণের জীবনমান উন্নয়নে এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে ইস্পাত কঠিন সংকল্প নিয়ে কাজ করেছেন এবং এখনও করে চলেছেন। তেমনি এক নেতৃত্ব জাতিসংঘের স্বীকৃৃতিসহ সারা পৃথিবীতে সুশাসনের জন্য নিজের দেশের সম্মান ও গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। নিজের দেশসহ সারা পৃথিবীতেই নিরাপত্তা, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্তি এবং স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য এই নেতৃত্ব বিশ্বসভায় অগ্রসর অবস্থান নিশ্চিত করেছেন। সেই নেতৃত্ব আর কেউ নন, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লেও আজ ন্যায় ও সুশাসন এবং উন্নয়নের প্রতীক বলে খোদ জাতিসংঘই বলছে বাংলাদেশ ও দেশটির নেতা শেখ হাসিনার কথা।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন সুশাসন ও মানবতার প্রতি বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনার এই সংকল্প? কেন তিনি নিজের দেশের মানুষ এবং বিশ্বের জন্য দারিদ্র্য দূরীকরণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে লিপ্ত? কেন তিনি বৈষম্যহীন এবং সকলের অংশগ্রহণমূলক, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি ‘সোনার বাংলা’ গঠনের স্বপ্নে বিভোর? কেন তিনি জাতিসংঘের নেতৃত্বে বিশ্বে সন্ত্রাস ও ধর্মীয় উগ্রবাদমুক্ত পৃথিবী উপহার দিতে প্রয়াসী? কেন তিনি নিজের দেশ এবং পৃথিবীর নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় এতটা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ? জাতি, লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণ এবং দেশের সীমারেখা নির্বিশেষে কেন তিনি একটি সহনশীল ও নিরাপদ বিশ্ব গঠনে জাতিসংঘকে অকুণ্ঠ সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছেন? কেন দৃঢ়ভাবে জাতিসংঘ সনদের আলোকে আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং বহুমাত্রিক কূটনৈতিক তৎপরতার প্রতি এতটা আস্থাশীল হয়ে বৈশ্বিক শান্তির পতাকা বয়ে বেড়াতে তিনি সদা তৎপর? এ প্রশ্নগুলো গভীরভাবে ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে।

শেখ হাসিনা এমন একটি সমাজের মানুষ যেখানে সুদূর অতীত থেকেই, ১৪৯২ সালে কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কার বা ষোড়শ শতাব্দীর ইউরোপীয় শিল্প বিপ্লবেরও আগে, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ছিল। কবি চ-ীদাসের ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’, কিংবা কাজী নজরুল ইসলামের ‘গাহি সাম্যের গান, মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান’Ñ এসব লেখায় আমরা সেই ইতিহাসের সাক্ষ্য পাই। চ-ীদাসের এ দর্শনতত্ত্ব বাঙালির মনন ও মানসের এতটাই গভীরে প্রোথিত যে তা শতাব্দীর পর শতাব্দী উচ্চারিত হয়েছে। মানবতাই সবার ঊর্ধ্বেÑ তেমনি এক আলোকিত পরিম-ল থেকে উঠে এসেছেন শেখ হাসিনা। তিনি এমন এক পরিবার থেকে এসেছেন, দেশ ও মানবতার জন্য আত্মত্যাগ যাদের অপরিসীম। তার পিতা সারাটা জীবন অতিবাহিত করে গেছেন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য যাকে জেল খাটতে হয়েছে জীবনের দীর্ঘ সময়। তিনি চেয়েছিলেন একটি শোষণমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র যেখানে সকলের জন্য সমানাধিকার, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার,

অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা-শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। তার স্বপ্ন ছিল এমন একটি দেশ যার মূল ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, শান্তি-সমৃদ্ধি এবং জননিরাপত্তা; যেখানে থাকবে না ক্ষুধা-দারিদ্র্য, শোষণ এবং অবিচার। এহেন একটি শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের প্রত্যয়ে যখন বঙ্গবন্ধু আত্মনিয়োগ করেছেন তার সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশে, ঠিক তখনই ১৯৭৫ সালে তাকে সপরিবারে হত্যা করে পরাজিত পাকিস্তানিদের দোসর এদেশীয় ঘাতকচক্র। ওই ভয়াল হত্যাকা-ে শেখ হাসিনা কেবল তার পিতাকেই নয়, হারান পরিবারের প্রায় সব সদস্যকে; এমনকি তার ৯ বছরের ছোট্ট শিশু ভাইকেও রেহাই দেয়নি খুনিরা। শুধু তিনি নিজে এবং তার ছোট বোন বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।

মানুষের জন্য শেখ হাসিনার জীবনসংগ্রাম এখানেই শেষ নয়, তিনি এ পর্যন্ত ২৩ বার প্রাণঘাতী হামলার শিকার হয়েছেন। প্রতিটি হামলার ক্ষেত্রেই তার প্রিয় রাজনৈতিক সহকর্মীদের অনেকেই নিহত বা আহত হয়েছেন; নয় তো পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। পরিবারের সবাইকে হারিয়ে, প্রিয় সহযোদ্ধাদের হারিয়েও শেখ হাসিনা দমে যাননি। তার লড়াই-সংগ্রাম চলছে। সারাবিশ্বে আর কোনো দেশে এমন একজন নেতা খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি নিজের সর্বস্ব হারিয়েও দেশের আপামর জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার এবং একটি উন্নত-সুন্দর জীবন প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি নিয়ত সংগ্রাম করে চলেছেন। দেশে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা-শিক্ষাসহ সকল মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অবিচল থেকে তিনি কাজ করে চলেছেন নিরন্তর।

এতে সন্দেহের কোনো

অবকাশই নেই যে দেশ ও বিশ্বপরিম-লে শেখ হাসিনা আজ গণতন্ত্র, উন্নয়ন, ন্যায়বিচার ও শান্তির প্রতীক। তারই নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতিসংঘে অনেকগুলো প্রস্তাব আনে, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানবকল্যাণ, টেকসই উন্নয়ন এবং সকল জাতিসত্তার অব্যাহত উন্নয়ন ও মুক্তি। উদাহরণস্বরূপ, তারই নেতৃত্বে ও তারই আনীত প্রস্তাবের কারণে জাতিসংঘে আজ ‘উন্নয়নের অধিকার’ একটি মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশের সভাপতিত্বে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ১৩২৫ নম্বর প্রস্তাবের কল্যাণে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা ও শান্তি বিনির্মাণের প্রতিটি পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনার কল্যাণেই আজ জাতিসংঘে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ বা ‘ঈঁষঃঁৎব ড়ভ চবধপব’ চালু হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী জোরালভাবে অনুসৃত হচ্ছে।

কেন এই শান্তির সংস্কৃতি এতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিক? এর মূলনীতি হচ্ছে এমন একটি আবহ সৃষ্টি করা যার মাধ্যমে পরমত সহিষ্ণুতা এবং অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত করা যায়Ñ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, ভাষা এবং নৃ-গোষ্ঠীগত পরিচয় নির্বিশেষে। কেননা, শান্তির সংস্কৃতি বিশ্বাস করে যে, অসহিষ্ণুতা এবং ঘৃণা থেকেই সর্বপ্রকার বিরোধ, সহিংসতা ও যুদ্ধের উৎপত্তি। তাই সকলের মাঝে যদি পারস্পরিক সহিষ্ণুতা এবং শ্রদ্ধাবোধ সৃজন করা যায়, তা হলেই আমরা যুদ্ধহীন ও সংঘাতমুক্ত এক পৃথিবী গড়তে পারব। তা হলেই সম্ভব হবে স্থায়ী উন্নতি, সমৃদ্ধি ও শান্তি অর্জনÑ জাতিসংঘের মূল লক্ষ্যও তাই। আশার কথা এই যে বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনা অনুসৃত শান্তির সংস্কৃতি আজ বিশ্বজুড়ে, সকল জাতির মাঝেই ব্যাপকভাবে অনুভূত হচ্ছে।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশ আজ সর্বোচ্চ সৈন্যদাতা রাষ্ট্র। যুদ্ধ আক্রান্ত রাষ্ট্রে যাতে সাধারণ মানুষ এবং শান্তিরক্ষীরা সুরক্ষিত থাকে সে বিষয়ে শেখ হাসিনা বদ্ধপরিকর। বিশ্বে তিনিই একমাত্র নেতা যিনি এমনকি বড়দিনের ছুটির মাঝেও জাতিসংঘ মহাসচিবের অনুরোধে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শান্তিরক্ষী প্রেরণের নির্দেশনা দিয়েছেন। শান্তিরক্ষী প্রেরণে তিনি কখনোই কার্পণ্য করেননি। এটি কোনো বিস্ময়ের ব্যাপার নয় যে ১ লাখ ৩৮ হাজার শান্তিরক্ষী বাহিনীর সমন্বয়ে জাতিসংঘ সারা পৃথিবীতে শান্তি রক্ষা করতে সমর্থ হচ্ছে যেসব সৈন্যের অনেকেই তাদের জীবনের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন। তারা প্রকৃত অর্থেই শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কারের দাবিদার।

শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতিসংঘে দুটি যুগান্তকারী প্রস্তাব আনে ২০১২ সালে, যা সর্বসম্মতিক্রমে বিশ্বসভায় গৃহীত হয়। এর প্রথমটি ছিল অটিজম ও প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকার সংক্রান্ত, আর দ্বিতীয়টি জনগণের ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত। তিনি বিশ্বাস করেন, সবারই অংশগ্রহণের সমান সুযোগ রয়েছে, কারোরই বাদ পড়ার কথা নয়। মানবতা ও উন্নয়নে সবাই নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী অবদান রাখতে পারে। তাই অটিজমে আক্রান্ত এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের জীবন যন্ত্রণা ও বঞ্চনার বিষয়টি যখন তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন উত্থাপন করেন, বাংলাদেশ দ্রুত এ বিষয়টি বিশ্বসভায় উত্থাপন করে এবং বিশ্বনেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ ও সমর্থন আদায় করে।

অটিজম এবং প্রতিবন্ধিতা সংক্রান্ত অনেকগুলো বড় বড় সভা আহ্বান করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ এবং তার সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সামনে বিষয়টি উত্থাপিত হওয়ার পরপরই মহাসচিব তা সাধারণ পরিষদে সেগুলো প্রস্তাবিত ও অনুমোদিত হয় এবং সদস্য রাষ্ট্রসহ সবকটি জাতিসংঘ সংস্থার কর্মকা-ে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়। এক্ষেত্রে বৈশ্বিক নেতৃত্বটি অবশ্যই বাংলাদেশের এবং দেশটির নেতা শেখ হাসিনার।

বিগত ৪০ বছরের জাতীয় ও বৈশ্বিক রাজনীতির অভিজ্ঞতা থেকে শেখ হাসিনা জানেন যে সামনের দিনগুলোতে বিশ্বের প্রধানতম চ্যালেঞ্জগুলো হবে জলবায়ু পরিবর্তন, বেকারত্ব, আর্থিক সংকট, দীর্ঘস্থায়ী ক্ষুধা ও দারিদ্র্য এবং এগুলো থেকে উদ্ভূত হাজারও সমস্যা। তাই তিনি বিশ্বাস করেন এই চ্যালেঞ্জগুলো তখনই মানুষ অতিক্রম করতে সক্ষম হবে যখন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা যাবে। একেই তিনি বলছেন জনগণের ক্ষমতায়ন। এটি সম্ভব হলে সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী শক্তি, সক্ষমতা এবং কার্যকরিতার সাথে মানুষ কাজ করতে পারবে, ফলে সবাই সমভাবে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অবদান রাখতে পারবে। তাই জনগণের ক্ষমতায়নের প্রতি তিনি এতটা গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে জনগণকে ক্ষমতায়িত করা যাবে? বিষয়টিকে তিনি ৬টি আন্তঃসংযুক্ত চলকের দ্বারা বিশ্লেষণ করেছেনÑ প্রথমত; মানুষের ক্ষমতায়ন হবে চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্তি সম্ভব হলে, দ্বিতীয়ত; তাদের ক্ষমতায়ন সম্ভব হবে প্রয়োজনীয় দক্ষতা, কারিগরি জ্ঞান ও মানসম্মত শিক্ষাদানের মাধ্যমে যাতে করে তারা নিজেরাই কর্মসংস্থান বা উপযুক্ত চাকরির ব্যবস্থা করে স্বাবলম্বী হবে, তৃতীয়ত; তাদের ক্ষমতায়ন সম্ভব হতে পারে বৈষম্য ও বঞ্চনার অবসানের মাধ্যমে, চতুর্থত; সন্ত্রাস নির্মূল করে একটি নিরাপদ জীবন নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়ন করা যাবে, পঞ্চমত; এতদিন যারা উন্নয়ন ও মূল জীবনধারার বাইরে ছিল, তাদের অন্তর্ভুক্ত করে ক্ষমতায়ন করা যাবে এবং সর্বোপরি, তাদের ক্ষমতায়ন সম্ভব হবে ভোটাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে ও শাসন ব্যবস্থায় সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে।

শেখ হাসিনার ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’ ধারণাটি জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনসসহ সদস্য রাষ্ট্রসমূহের নেতৃবৃন্দের মধ্যেও অনুরণিত হয়েছে। ২০১২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত ‘রিও+২০ বিশ্ব সম্মেলনে’ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ‘যেমন ভবিষ্যৎ চাই’ শীর্ষক দলিল গ্রহণ করেন যার মধ্যে শেখ হাসিনা প্রণীত জনগণের ক্ষমতায়ন নীতিমালা এবং তার সাথে জড়িত আদর্শ অনুসৃত হয়। উক্ত সম্মেলনে দারিদ্র্য দূরীকরণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়, যার মূল ভিত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে সকলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত স্থিতিশীলতা অর্জন। সম্প্রতি জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত প্রস্তাব যা, ‘20130 Agenda for Sustainable WorldÕ বা ÔSDGs’ নামে পরিচিত সেটির মূল ভিত্তিই ছিল রিও+২০ তে অনুসৃত শেখ হাসিনার জনগণের ক্ষমতায়ন তত্ত্ব। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা জাতিসংঘে গ্রহণ করেন ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, যার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের যথার্থভাবেই শেখ হাসিনা প্রণীত জনগণের ক্ষমতায়ন নীতিমালার আলোকে সবার অন্তর্ভুক্তি, মানসম্মত শিক্ষা, প্রযুক্তি হস্তান্তর, দারিদ্র্য দূরীকরণ, জনগণের অংশগ্রহণ, আইনের শাসন, সুশাসন ইত্যাদি নির্ধারিত হয়।

তার গতিশীল নেতৃত্বে জাতিসংঘে বাংলাদেশ কর্তৃক উত্থাপিত প্রতিটি বিষয়ই এসডিজি-র ১৭টি লক্ষ্য এবং ১৬৯টি উদ্দেশের মাঝে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রযুক্তি হস্তান্তর, শিল্পায়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, অভিবাসন ও উন্নয়ন, মানসম্মত শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ-সমতা, শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত বাজার প্রবেশাধিকার, জলসম্পদের আন্তঃদেশীয় ব্যবস্থাপনা, জীববৈচিত্র্য, নীল অর্থনীতি (সাগর ও মহাসাগর), বিশ্ব আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অধিকতর অংশগ্রহণের সুযোগ, শান্তি ও স্থিতিশীলতা, আইনের শাসন, পারস্পরিক সহযোগিতা, এলডিসি ইস্যু ইত্যাদি।

জাতিসংঘের সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে অবিস্মরণীয় অগ্রগতি, তা মূলত সম্ভব হয়েছে দেশটির নেতা শেখ হাসিনার উন্নয়ন চিন্তা এবং জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে তার অবিচল প্রতিজ্ঞার কারণেই। সম্পদের ব্যাপক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও কেবল নেতৃত্বের বিচক্ষণতা, দৃঢ়তা এবং সঠিক দিক-নির্দেশনার কারণেই বাংলাদেশ এই লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এককালে যে দেশকে বলা হয়েছিল ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ (Bottomless Basket), যার ‘সফল হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই’ বিশ্ব মোড়লেরা দেখেনি, সেই দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আজ ৬.৩ শতাংশ, তাও আবার এক নাগাড়ে সাত বছর ধরে। চরম দারিদ্র্য ১৯৯১ সালে যেখানে ছিল ৫৭.৮ শতাংশ, ২০১৫ সালে তা কমে এসেছে ২২.৪ শতাংশেরও নিচে। একই সাথে নবজাত শিশু মৃত্যুর হার ৭৩ শতাংশ কমিয়ে আনতে পেরেছে বাংলাদেশ। বিশ্বের সর্বাধিক জনঅধ্যুষিত ও স্বল্প আয়তনের এক দেশের জন্য এই সাফল্য একেবারে কম নয়। আর এই অর্জন সম্ভব হয়েছে কেবল শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণেই।

দেশের অভ্যন্তরে ব্যাপক বিরোধিতা এবং নানান প্রতিবন্ধকতার মধ্যও শেখ হাসিনা তার দৃঢ় ও আপসহীন সিদ্ধান্তের দ্বারা দেশকে উন্নয়নের পথে যেভাবে পরিচালিত করেছেন, তার কল্যাণেই বাংলাদেশ খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, অথচ পূর্বে দীর্ঘ সময় ধরে দেশটি ছিল খাদ্য ঘাটতির মধ্যে। এই ব্যাপক পরিবর্তনের জন্য শেখ হাসিনা এবং তার দেশবাসী বিশ্বসভায় সাধুবাদ পেতেই পারেন। আর তারই প্রমাণ আমরা দেখি যখন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেল’ এবং ‘নারীর ক্ষমতায়নের উজ্জ্বল নক্ষত্র’। আমেরিকার প্রভাবশালী ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ভাষায় বাংলাদেশ হচ্ছে ‘দক্ষিণ এশিয়ার আলোকবর্তিকা’ আর গোল্ডম্যান শ্যাক্স তাদের গ্লোবাল অবস্থানে বাংলাদেশকে এন-১১ তে উন্নীত করেছে, যার অর্থ হচ্ছে ১১টি অগ্রসরমান অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ।

দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবিলার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম প্রধান দেশের সুনাম অর্জন করেছে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ শেখ হাসিনার নেতৃত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে একাধিক পদকে ভূষিত করেছে, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনের জন্য এমডিজি-৪ পুরস্কার (২০১০)। সাউথ-সাউথ পুরস্কারে তিনি ভূষিত হন ২০১৩ সালে, দেশজুড়ে ১৩ হাজার ৮০০ কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং ৪ হাজার ৫০১টি ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে জনগণকে সফলভাবে ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির সংযোগের আওতায় নিয়ে আসার স্বীকৃতিস্বরূপ। ২০১৪ সালে তাকে সাউথ-সাউথ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয় বিশ্বের দক্ষিণের দেশগুলোতে নেতৃত্বের দূরদর্শিতার স্বাক্ষর হিসেবে। ২০১৫ সালে তিনি জাতিসংঘ কর্তৃক দুটি পুরস্কারে ভূষিত হন, এগুলো হচ্ছেÑ জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব মোকাবিলায় সফলতার জন্য ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার এবং টেলিযোগাযোগ খাতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন সংস্থার পুরস্কার বা ‘আইটিইউ অ্যাওয়ার্ড’।

২০০০ সালে যখন জাতিসংঘে সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) ঘোষণা প্রদান করা হয় তখন শেখ হাসিনা বাংলাদেশের নেতা হিসেবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আবার ২০১৫ সালে যখন ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জনের লক্ষ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা (এসডিজি) হয় তখনও তিনি বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে জাতিসংঘে নেতৃত্বদান করেন। তিনি বিশ্বের একমাত্র নেতা যিনি জাতিসংঘের উন্নয়ন সংক্রান্ত এ দুই মাইলফলক ঘোষণার সময় নিজের দেশের নেতা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তার দেশ সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে মর্মে ২০০০ সালের সম্মেলনে তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রতিশ্রুতি দেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সামনে। সেই প্রতিশ্রুতি তিনি রক্ষা করেছেন। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম সেই যে সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছে। ২০১৫ সালের সম্মেলনে আবার যখন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেন (যা ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জন করতে হবে)

তখন শেখ হাসিনা বিশ্বসভায় এই প্রতিশ্রুতি দেন যে তার দেশ এই লক্ষ্যমাত্রাও যথাসময়ে পূরণ করবে। শুধুু সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকেন নি তিনি, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে তারই স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছেন তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী ও বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা। এ হবে এমন এক বাংলাদেশ যেখানে সবাই পাবে সমানাধিকার, ন্যায়বিচার এবং সুষম উন্নয়নের সুযোগ। যেখানে সমৃদ্ধি ও শান্তির মাঝে বাস করবে দেশের প্রতিটি মানুষ। সেই স্বপ্নই দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।

সাউথ-সাউথ দেশগুলোর অর্থনৈতিক ক্ষমতার পরিধি ক্রমেই বাড়ছে। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ ২ গুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। প্রায় ৩০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের এক বিশাল বাজারে পরিণত হবে এ দেশগুলো। তা সত্ত্বেও এ দেশগুলোর পূর্ণ সম্ভাবনা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য এ দেশগুলোর প্রতিবছর ৫ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করতে হবে। বর্তমানে বৈদেশিক সাহায্য স্কিমের আওতায় উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্রসমূহ বছরে ১৩৮ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়ে থাকে যার মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে যায় মাত্র ৩৮ থেকে ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য অর্থ পর্যাপ্ত নয়। সাউথ-সাউথ দেশগুলোর অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোার জন্য এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অগ্রগতি যথাযথভাবে তদারকি ও মূল্যায়নের জন্য বাংলাদেশ সাউথ-সাউথ দেশগুলোর অর্থ ও উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রীদের একটি ফোরাম গঠনের প্রস্তাব করেছে, যা আন্তর্জাতিক মহল কর্তৃক সমর্থিত হয়েছে। সম্প্রতি চীন সাউথ-সাউথ সহযোগিতার জন্য ১ বিলিয়ন ডলারেরও


‘আধুনিক বিশ্বে বাংলাদেশ আরও একটি কারণে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করছে, তা হলোÑ একটি শক্ত, সৃজনশীল ও পরিশ্রমী অভিবাসী শ্রমিকদের দেশ হিসেবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আজ বাংলাদেশের প্রায় ৯০ লাখ প্রবাসী নাগরিক রয়েছেন যারা কঠোর পরিশ্রম বাংলাদেশের বিভিন্ন বন্ধু রাষ্ট্রসমূহের অবকাঠামো উন্নয়নে অবদান রাখছেন, তাদের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করছেন।’ বেশি অনুদানের ঘোষণা দিয়েছে।

শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো কর্তৃক ২১ ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা শহীদ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সক্ষম হয়। এ কথা আজ সারাবিশ্ব জানে যে, ১৯৫২ সালে মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাংলাদেশের জনগণ তাদের বুকের রক্ত দিয়েছে। সেই আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ পৃথিবীর সব জাতির মাতৃভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার প্রয়াসে সেই দিনটিকে জাতিসংঘ সম্মানিত করেছে, যা আজ বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব দেশে পালিত হচ্ছে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আইনের শাসনে প্রতিষ্ঠার অনন্য নজির স্থাপন করেছে। দীর্ঘদিন ধরে বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমা নিয়ে প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সাথে যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল সেই বিষয়ে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সমুদ্র-আইন সংক্রান্ত ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার যে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত তিনি গ্রহণ করেন, তারই ফলস্বরূপ বাংলাদেশ তার সমুদ্রসীমার ওপর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। অন্যদিকে প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্র ভারত এবং মিয়ানমারও তাদের আইনগত ন্যায্য পাওনা পেয়েছে। কোনো সংঘাত বা যুদ্ধ ছাড়াই এহেন বিরোধ নিষ্পত্তির ঘটনা পৃথিবীতে বিরল।

শেখ হাসিনার শাসনের প্রথম মেয়াদে (১৯৯৬-২০০১) বাংলাদেশে কয়েকটি যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে। এর প্রথমটি ছিল ভারতের সাথে দীর্ঘদিনের সমস্যা গঙ্গা নদীর পানির বণ্টনের ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর। এর মাধ্যমে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ গঙ্গা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় যে ঐতিহাসিক ঘটনা সেই সময়ে ঘটে সেটি হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর। যে সমস্যার আবর্তে সন্দেহ ও অবিশ্বাসের দোলাচলে সেই সময় পর্যন্ত ২৫ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল, রাষ্ট্রনায়কোচিত পদক্ষেপ নিয়ে শেখ হাসিনা সেই দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের অবসান ঘটান বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে। পৃথিবীর সাম্প্রতিক ইতিহাসে শান্তি প্রতিষ্ঠার এমন নজির বিরল। মার্কিন কংগ্রেস এবং বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এই সাহসী দুই চুক্তির জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও সাহসী নেতৃত্বের ভূয়সী প্রসংশা করেছে। সম্প্রতি কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনা, রাজনৈতিক বিচক্ষণতা ও প্রশাসনিক কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে ভারতের সাথে অর্ধশতক ধরে ঝুলে থাকা ছিটমহল সমস্যার সমাধান করেছেন ৬৮ বছর আগের ‘সীমান্ত নির্ধারণ চুক্তি’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে। ফলে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার এবং ন্যায়বিচার পেয়েছে দীর্ঘদিন ভাগ্যবিড়ম্বিত থাকা উভয় দেশের ছিটমহলবাসী। প্রকৃত অর্থেই শেখ হাসিনা শান্তি ও স্থিতিশীলতার মূর্ত প্রতীকে পরিণত হয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার এই অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের জন্য। আশার আলোকবর্তিকা হয়ে তিনি আবির্ভূত হয়েছেন বিশ্বের শত কোটি নিপীড়িত মানবতার জন্য।

আধুনিক বিশ্বে বাংলাদেশ আরও একটি কারণে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করছে, তা হলোÑ একটি শক্ত, সৃজনশীল ও পরিশ্রমী অভিবাসী শ্রমিকদের দেশ হিসেবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আজ বাংলাদেশের প্রায় ৯০ লাখ প্রবাসী নাগরিক রয়েছেন যারা কঠোর পরিশ্রম বাংলাদেশের বিভিন্ন বন্ধু রাষ্ট্রসমূহের অবকাঠামো উন্নয়নে অবদান রাখছেন, তাদের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করছেন। একই সাথে নিজেদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা স্বদেশে পাঠিয়ে তারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তবে এসব প্রবাসী শ্রমিকদের জীবনে থাকে অজ¯্র দুঃখগাঁথা, বঞ্চনা আর প্রতারণা কাহিনি। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা নিজেদের ন্যায্য বেতনটুকু থেকেও বঞ্চিত হন। অথচ এই প্রবাসীরাই মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে কি অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন বিদেশের মাটিতে। আবার আজ তারা সেই বিদেশে থেকেও নিজের দেশকে সমৃদ্ধ ও উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যেতে রাখছেন ব্যাপক অবদান। সহ¯্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে প্রবাসীদের আয় রেখেছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। দেশে বিনিয়োগ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি। ৯০ লাখ প্রবাসী শ্রমিকের ওপর দেশের প্রায় ৩৩ শতাংশ মানুষ নির্ভর করে, যাদের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এই অভিবাসী শ্রমিক এবং বিদেশে অবস্থানরত দক্ষ বাংলাদেশি পেশাজীবীদের স্বীকৃতি প্রদান করেছে; তাদের সুরক্ষা এবং দেশে তাদের বিশেষ সম্মানের ব্যবস্থা করেছে এবং তাদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য গ্রহণ করেছ নানামুখী পদক্ষেপ। প্রবাসে তাদের সমস্যা সমাধানে নিদের দেশের সরকারি প্রতিনিধি/কূটনীতিকদের যেমন তিনি নির্দেশনা দিচ্ছেন ঠিক তেমনি বিশ্বসভায় তিনি এই দাবি তুলেছেন যে প্রবাসী শ্রমিকদের কল্যাণে হোস্ট কান্ট্রি বা শ্রমিকদের অবস্থানকারী রাষ্ট্রের দায়িত্ব অনেক। তাদেরই এটি নিশ্চিত করা কর্তব্য যাতে তাদের দেশে প্রবাসী শ্রমিকদের কেউ শোষণ, নির্যাতন বা কোনোরকম বৈষম্য বা বঞ্চনার শিকার হতে না হয়। একই সাথে উন্নত দেশগুলোরও এ বিষয়ে যতœবান হওয়া উচিত যাতে তাদের দেশে কর্মরত বিদেশি শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষিত হয় এবং সেই সব সংগ্রামী শ্রমজীবী জনতা যেন কোনো প্রকার শোষণ, নির্যাতন বা প্রতারণার শিকার না হন।

দেশে এবং বিদেশে বাংলাদেশি নাগরিকদের অধিকার আদায়ে এতটা সোচ্চার এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কণ্ঠস্বর হতে পারে বলেই হয়তো বাংলাদেশ গত ৬টি বছরের জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনে এবং বিভিন্ন কমিটিসমূহের নির্বাচনে জয়লাভ করে নির্বাচিত হয়েছে। বস্তুত, এ সময়ের মধ্যে কোনো আন্তর্জাতিক নির্বাচনেই বাংলাদেশ পরাজিত হয়নি; বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রসমূহ বাংলাদেশের কথা ভেবে, বাংলাদেশ নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে ওইসব নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে নিজেদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারও করে নিয়েছে। বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ তথা বিশ্ব নেতৃত্বের আস্থা এবং প্রগাঢ় ভরসারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে এসব আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে।

জাতিসংঘের সেকেন্ড কমিটির চেয়ার হিসেবে অধিকাংশ বিতর্কেই বাংলাদেশ সকল সদস্যকে মতৈক্যে নিয়ে আসতে পেরেছে। পিস বিল্ডিং কমিটি (পিবিসি) বা অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের (ইসিওএসওসি) চেয়ার হিসেবে বিশ্বব্যাংকে জাতিসংঘ কমিটিসমূহের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করাতে সক্ষম হয় বাংলাদেশে। সাউথ-সাউথ কো-অপারেশনের চেয়ার হিসেবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে বাধাসমূহ ও করণীয় চিহ্নিতকরণে বাংলাদেশ নেতৃস্থানীয় ভূমিকা গ্রহণ করে। জাতিসংঘের ব্যুরো সদস্য এবং এলডিসি গ্রুপের চেয়ার হিসেবে ইস্তাম্বুল কর্মপরিকল্পনা (আইপিএও) প্রণয়নে বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা রাখে; শুধু তাই নয়, জাতিসংঘের বিভিন্ন ফান্ড যেমন ইউনিসেফ, ইউএনডিপি, ইউএন উইমেন, জাতিসংঘ জনসংখ্যা কমিশন ইত্যাদির চেয়ার হিসেবে ওইসব অঙ্গ সংগঠনের কর্মপরিকল্পনায় ইস্তাম্বুল কর্মপরিকল্পনা অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্যতম ভূমিকা পালন করে।

সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতিসংঘ কমিটির ফ্যাসিলিটেটর হিসেবে ২০১০ সালে বাংলাদেশ উক্ত কমিটির প্রস্তাব সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মতৈক্যের অর্জনে সফল হয়। ‘মানবপাচার প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতিসংঘের বন্ধু’ রাষ্ট্রসমূহের সদস্য হিসেবে জাতিসংঘের প্রস্তাব পাসের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। মানবপাচার প্রতিরোধ ও অবসানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সাহসের সাথে উটের জকি ও দাস হিসেবে শিশুদের ব্যবহারের বিরুদ্ধে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের মাঝে সোচ্চার জনমত গড়ে তোলেন এবং মধ্যপ্রাচ্যে পাচার হয়ে যাওয়া বাংলাদেশি শিশুদের উদ্ধারের নির্দেশ দেন ও তাদের উদ্ধার পরবর্তী পুনর্বাসনের পদক্ষেপ সংক্রান্ত সার্ক সম্মেলনে ঘোষণা ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘের ‘ফ্রেন্ডস অব মিডিয়েশন’, ‘ফ্রেন্ডস অব ইনএ্যলিনেবল্ রাইটস অব প্যালেস্টাইন’, ‘ফ্রেন্ডস অব নো ফুড ওয়েস্ট, নো ফুড লস’ ইত্যাদি ভূমিকায় মানবতার মর্যাদা রক্ষা এবং জাতিসংঘ সদনের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

বস্তুতপক্ষে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতিসংঘে একটি অত্যন্ত সম্মানজনক সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে এবং বর্তমানে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে জাতিসংঘ কর্তৃক বাংলাদেশকেই চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। কেবল সর্বোচ্চ সৈন্য প্রেরণকারী দেশ হিসেবেই নয়, সক্ষমতার সাথে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাকারী দেশ হিসেবেও বাংলাদেশের সুনাম আজ জাতিসংঘে ব্যাপক। জাতিসংঘের ‘হি অ্যান্ড শী’ প্রোগ্রামের চ্যাম্পিয়ন হিসেবেও বাংলাদেশের নাম চলে আসে সবার আগে। জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘শিক্ষাই সর্বাগ্র’ শীর্ষক প্রকল্পে এবং মহাসচিবের স্বাস্থ্যরক্ষা সংক্রান্ত উদ্যোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে গণ্য করা হয়। মহাসচিবের নেতৃত্বে শান্তিরক্ষী নিয়োগ সংক্রান্ত সিনিয়র পরামর্শক কমিটির সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষীদের নীল হেলমেট প্রদানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা সংক্রান্ত আঞ্চলিক রিভিউ কমিটির ঢাকা কনফারেন্সের আয়োজন করে বাংলাদেশ, ২০১৪ সালে এবং সদস্য রাষ্ট্রসমূহের শান্তিরক্ষীদের প্রশিক্ষণ দান করে। প্রতি ১০ শান্তিরক্ষীর মধ্যে একজন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ নারী শান্তিরক্ষীদের জন্য নীল হেলমেট, বর্ম ও তলোয়ার চালানো এবং পুলিশের একটি নারী ইউনিট বসানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

জলবাযু পরিবর্তন মোকাবিলার ক্ষেত্রে জাতিসংঘে অত্যন্ত সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অপূরণীয় ক্ষতি ও চ্যালেঞ্জকে বিশ্ববাসীর সামনে যথার্থভাবে তুলে ধরতে তিনি সদা সচেষ্ট থেকেছেন। তিনিই একজন নেতা যিনি এ বিষয়টিকে বিশ্ববাসীর সামনে বারংবার তুলে ধরেছেন যে, পরিবেশ দূষণকারী না হয়েও স্বল্পোন্নত ও দ্বীপ-রাষ্ট্রসমূহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সবচেয়ে বড় হুমকির মধ্যে রয়েছে। কেবল বাগাড়ম্বর বা উচ্চবাচ্য না করে এ বিষয়টি তিনি কর্মপরিকল্পনার মধ্যে গ্রহণ করেছেন এবং বিষয়টি নিয়ে কীভাবে বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগুনো যায় তা নিজে তদারক ও কাজ করে চলেছেন। আজ সম্পদের স্বল্পতা ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা সংক্রান্ত দুটি ফান্ড গঠন করেছে। তাই সংগত কারণেই জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) তাকে চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। কেননা পরিবেশ সুরক্ষার জন্য তিনিই বিশ্বের সিংহভাগ জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর; এবং পরিবেশ নীতিমালা গঠনের ক্ষেত্রে জোরাল ভূমিকা রেখেছেন। জলবায়ু ঝুঁকি ফোরাম (সিভিএফ) এবং জলবায়ু ঝুকিপ্রবণতা তদারকি (সিভিএম) গঠন করেছেন তিনিই। তার প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়েই জাতিংঘে ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিষয়ের দায়িত্ব বিষয়ক রাষ্ট্রদূত’ ফোরাম (Ambassadors with Responsibility to Climate Change-ARC) এবং ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বন্ধু’ (Friends of Climate Change-FCC) গঠন করা হয়েছে, যারা জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে তার যুদ্ধ ঘোষণার পরই আমরা দেখতে পাই যে অন্যান্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এই জটিল ইস্যুতে এগিয়ে আসছেন।

যুদ্ধ-বিগ্রহ, ভয়াল বন্যা, অনাবৃষ্টি, ক্ষরা, নদীভাঙন ইত্যাদি নানা কারণে সাম্প্রতিককালে দেশে দেশে যে হারে মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে বা নিজ দেশে কাজ হারিয়ে দেশান্তরী হয়ে পড়ছে জীবিকার তাগিদে, কিংবা শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় খুঁজছে বিভিন্ন দেশে তখন সেই সব কঠিন সমস্যার কারণ খুঁজে আর কোনো মানুষ যেন শরণার্থী না হয়, বাস্তুচ্যুত না হয় তার ব্যবস্থা করার জন্য জোরাল দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ। সম্পদশালী দেশগুলো সম্পদের অপব্যবহারের মাধ্যমে আজ পৃথিবীর পরিবেশের এই দশা করেছে, যদিও তাদের অবিমৃষ্যকারিতার ফল পেতে হচ্ছে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে, যারা হয়তো কোনোভাবেই এই ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা জলবায়ু’র কারণে উদ্বাস্তু হওয়ার জন্য দায়ী নয়। অথচ তাদেরই সবচেয়ে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। বাংলাদেশ মনে করে এই অবস্থা হতে উত্তরণের দায় এবং দায়িত্ব উভয়ই উন্নত বিশ্বকে নিতে হবে। হয় তাদের এসব নানান প্রক্রিয়ায় করা পরিবেশ দূষণ বন্ধ করতে হবে; অথবা তাদের এমন কাজ করতে হবে যাতে যুদ্ধ-বিগ্রহ না বাধে বা মানুষ নিজের দেশ ছাড়তে বাধ্য না হয়।

শেখ হাসিনা কথা নয়, কাজে বিশ্বাসী। লক্ষ্য অর্জনে তিনি পিছপা নয় এক কদমও। তার অক্লান্ত প্রয়াসের ফলে বাংলাদেশের কর্মজীবী জনসংখ্যার মাঝে আজ নারীর অংশগ্রহণ প্রায় ৩৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা পূর্বে ছিল মাত্র ৭ শতাংশ। আজ বাংলাদেশে সরকার প্রধান একজন নারী। জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং সংসদ উপনেতাও নারীÑ নারীর ক্ষমতায়নের এ এক অনবদ্য সংযোগ। শেখ হাসিনার বাংলাদেশ সেই গুটিকয়েক রাষ্ট্রের মধ্যে অন্যতম যেখানে বছরের শুরুতে দেশব্যাপী শিশুদের মধ্যে ৩২৬ মিলিয়ন বই বিতরণ করা হয় বিনামূল্যে। বাংলাদেশ সেই রাষ্ট্র যেখানে এনজিওরা উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সরকারের সাথে সমান তালে অংশগ্রহণ করে। তাই বাংলাদেশ আজ তার উদ্ভাবনী সুশাসন প্রক্রিয়া এবং যুক্তির নিরখে চলার জন্য বিশ্ব দরবারে সম্মানিত। সামগ্রিক এই প্রক্রিয়ায়, সন্দেহ বা বিস্ময়ের কোনো অবকাশই নেই যে, সেই বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনা, আজ জাতিসংঘ তথা বিশ্ব পরিম-লে শান্তি ও ন্যায্যতার এক মূর্ত প্রতীক হিসেবে নিজের দেশ ও জনগণকে তুলে ধরেছেন সবার ওপরে।

জয়তু বিশ্বনেতা শেখ হাসিনা।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান

* জনগণের ক্ষমতায়ন মডেল : অস্থিরতা, সহিংসতা, পরমত অসহিষ্ণুতা, বৈষম্য এবং ব্যাপক জন-অসন্তোষের ক্ষেত্রে এই মডেল বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

* কালচার অব পিস : বিগত সময়ে সরকারের থাকাকালীন বাংলাদেশ কর্তৃক জাতিসংঘে শান্তির সংস্কৃতির ধারণা প্রচলন করা হয়। জাতিসংঘের ভিতরে ও বাইরে এই ধারণা ব্যাপক সমর্থন লাভ করে; কেননা এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। বিষয়টি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, যা সমগ্র জাতিসংঘ ব্যবস্থার মাঝে অনুরণিত হয়।

* শান্তিরক্ষা কার্যক্রম (পিস কিপিং) : শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা সর্বজনবিদিত ও স্বীকৃত। জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিম-লে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বদ্ধপরিকর। তার গতিশীল নেতৃত্বে বিশ্বে আজ সর্বোচ্চ সংখ্যক শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে সমাদৃত বাংলাদেশ।

* শান্তি বিনির্মাণ (পিস বিল্ডিং) : তার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ শান্তি বিনির্মাণের বিষয়টি বিশ্বব্যাপী গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছে। স্বল্পদিন হলো এ সংক্রান্ত কমিশন গঠিত হয়েছে, যা ইউএন পিস বিল্ডিং কমিশন নামে পরিচিত। বাংলাদেশ এর গুরুত্বপূর্ণ মিটিংসমূহে সভাপতিত্ব করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতার কারণে এ সংক্রান্ত সব কার্যক্রমের আলোচনায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে।

* বহুমাত্রিক নেতৃত্ব : নানামুখী জাতীয় ও বৈশ্বিক ইস্যুতে চ্যালেঞ্জ নিতে পিছপা নন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার অবিচল নেতৃত্বে বাংলাদেশে জাতিসংঘের বিভিন্ন কমিটি এবং অনেকগুলো আন্তর্জাতিক সংস্থায় সভাপতি এবং সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছে। বিগত ছয় বছরে বাংলাদেশে কোনো একটি নির্বাচনেও পরাজিত হয়নি। সকল দেশ ও তাদের নেতাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ এবং তার নেতা শেখ হাসিনা।

* সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মডেল দেশ : জাতিসংঘ মহাসচিবের ভাষ্যমতে বাংলাদেশ এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কেবল স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যেই নয়, অনেকগুলো উন্নত দেশের চেয়েও বাংলাদেশের এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সাফল্য ব্যাপক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে এর সফল বাস্তবায়ন তদারক ও মূল্যায়ন করে থাকেন এবং প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।

* ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহের সুরক্ষা ও নেতৃত্ব দান : বর্তমানে বাংলাদেশ ৪৮টি স্বল্পোন্নত দেশের নেতা ও মুখপাত্র। তাই জাতিসংঘ তথা আন্তর্জাতিক ফোরামে এসব দেশের স্বার্থ রক্ষা এবং তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ের নেতৃত্বও বাংলাদেশেরই। সর্বসম্মতভাবে বাংলাদেশ এই পদে নির্বাচিত হয়; বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতাই বাংলাদেশকে এই পদে আসীন করেছে। এলডিসি রাষ্ট্রসমূহের স্বার্থরক্ষায় তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

* ভিন্ন জীবনের মানুষের সমস্যাকে পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসা : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণেই জাতিসংঘের সকল রাষ্ট্রের কাছে আজ অটিজমে আক্রান্ত শিশু ও অটিজম সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গের সমস্যাবলি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে। এ সংক্রান্ত বাংলাদেশের প্রস্তাব পৃথিবীর সব কটি রাষ্ট্রের অকুণ্ঠ সমর্থন লাভ করেছে। বিষয়টির প্রবক্তা হিসেবে বাংলাদেশের নাম আজ সব দেশ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।

* জলবায়ুর ঝুঁকি আক্রান্তদের সমস্যায় নেতৃত্ব : জাতিসংঘের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সক্রিয়ভাবে কাজ করে দেখিয়েছেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ঝুঁকি কতটা। এ সমস্যার কারণ খুঁজে আর কোনো মানুষ যেন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শরণার্থী না হয়, বাস্তুচ্যুত না হয় তার ব্যবস্থা করার জন্য জোরাল দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ। সম্পদশালী দেশগুলো সম্পদের অপব্যবহারের মাধ্যমে আজ পৃথিবীর পরিবেশের এই দশা করেছে, যদিও তাদের অবিমৃষ্যকারিতার ফল পেতে হচ্ছে স্বল্পোন্নত দেশগুলো, যারা হয়তো কোনোভাবে এই ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা জলবায়ু’র কারণে উদ্বাস্তু হওয়ার জন্য দায়ী নয়। অথচ তাদেরই সবচেয়ে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। বাংলাদেশ মনে করে, এই অবস্থা হতে উত্তরণের দায় এবং দায়িত্ব উভয়ই উন্নত বিশ্বকে নিতে হবে। হয় তাদের এসব নানান প্রক্রিয়ায় করা পরিবেশ দূষণ বন্ধ করতে হবে; অথবা তাদের এমন কাজ করতে হবে যাতে যুদ্ধ-বিগ্রহ না বাধে বা মানুষ নিজের দেশ ছাড়তে বাধ্য না হয়। জলবায়ু ঝুঁকি ফোরাম (সিভিএফ) এবং জলবায়ু ঝুঁকিপ্রবণতা তদারকি (সিভিএম) গঠন করেছে বাংলাদেশ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এর প্রতিষ্ঠা করেন জাতিসংঘের ৬৭তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে।

* আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ আইনি সমাধান : শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অনন্য নজির স্থাপন করেছে। দীর্ঘদিন ধরে বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমা নিয়ে প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সাথে যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল সেই বিষয়ে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন সংক্রান্ত ট্রাইব্যুনালে (International Tribunal on the Law of the Seas-ITLOS) যাওয়ার যে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত তিনি গ্রহণ করেন, তারই ফলস্বরূপ বাংলাদেশ তার সমুদ্রসীমার ওপর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। অন্যদিকে প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্র ভারত এবং মিয়ানমারও তাদের আইনগত ন্যায্য পাওনা পেয়েছে। কোনো সংঘাত বা যুদ্ধ ছাড়াই এহেন বিরোধ নিষ্পত্তির ঘটনা পৃথিবীতে বিরল।

* জাতিসংঘের মাধ্যমে অভিবাসীদের অধিকারের সুরক্ষা : অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষার জন্য নিরলস কাজ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সংক্রান্ত জাতিসংঘ কমিটিতে তিনি যথার্থভাবে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন এবং তার পক্ষে সমর্থন আদায়ে সক্ষম হয়ছেন। অভিবাসী শ্রমিকের মানবাধিকার, কাজের পরিবেশ, বেতন ও নিরাপত্তা এসব বিষয়ে নিশ্চিত করার জন্য সকল রাষ্ট্রের প্রতি তিনি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

* সাউথ-সাউথ অ্যান্ড ট্রায়াঙ্গুলার কো-অপারেশনের কণ্ঠস্বর : সাউথ-সাউথ সংক্রান্ত জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সভাপতি বাংলাদেশ। আর সাউথ-সাউথের কণ্ঠস্বর হচ্ছেন শেখ হাসিনা। সম্প্রতি এই রাষ্ট্রসমূহের সাফল্য ব্যাপক, যার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দৃশ্যমান।

জাতিসংঘ সনদের মূল লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়ন

* প্রথমত : সহিষ্ণুতার চর্চা এবং ভালো প্রতিবেশী হিসেবে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান;

* দ্বিতীয়ত : আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার সাথে একতাবদ্ধ থাকা;

* তৃতীয়ত : এই নীতির প্রতি অবিচল থাকা যে শক্তি প্রয়োগ কোনোভাবে করা হবে না, একমাত্র সামষ্টিক স্বার্থ ছাড়া;

* চতুর্থত : বিশ্বের সকল মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহকে কাজে লাগানো;

* প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সনদের এসব মূলনীতির আলোকে একটি সুন্দর, নিরাপদ ও শন্তিপূর্ণ পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন।

Friday, March 30, 2018

মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী মহোদয় সমীপে মুক্তির খোলা চিঠিঃ

মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী মহোদয় সমীপে মুক্তির খোলা চিঠিঃ
মহোদয়,
যথাযোগ্য মর্যাদা ও সন্মান পুরঃসর বিনীত নিবেদন এই যে, আমি জন্মসূত্রে একজন বাংলাদেশি জাতীয় কন্ঠশিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। ইউনিক গ্রুপের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ নূর আলীর ব্যক্তিগত সচিব থাকাকালীণ ২০০২ সালে জামাত বি এন পি জোট সরকারের অবৈধ আস্তানা "হাওয়া ভবনের" ভূয়া মামলা ও নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হই এবং মালদ্বীপে এসে একটি স্কুলে শিক্ষকতা শূরু করি।
আমার চির স্বভাবজনিত দুর্বিনীত প্রতিবাদী মানসিকতার কথা স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমান সরকারের বহু নেতা/মন্ত্রীগণ অবহিত রয়েছেন। আওয়ামী লীগ অফিসে বঙ্গবন্ধুর গানের মুক্তি নামেই সর্বজনবিদিত।
আওয়ামী রক্ত তাই প্রবাসে এসেও নীরব থাকতে পারিনি; যে দেশে প্রবাসীদের রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ সে দেশে আমি মুক্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম মালদ্বীপ আওয়ামী লীগ।
মালদ্বীপস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ( সাবেক হাই কমিশন) এর সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী হিসেবে বহু লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে।
Image may contain: 1 person
এমন কি এতদবিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জেনারেল আবেদীন, সাবেক মন্ত্রী কর্নেল ফারুক, আব্দুস সোবহান গোলাপ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, জয়নাল হাজারী, শামীম ওসমান, জুনায়েদ আহমেদ পলক ও ডঃ দীপুমনিও অবহিত আছেন।
মালদ্বীপ আওয়ামী লীগের অনেক অনুষ্ঠানেই বহু মন্ত্রী ও মান্যবর সাবেক হাই কমিশনার রিয়ার এডমিরাল আওয়াল সাহেবও যোগদান করেছিলেন । ভিডিও ও ছবি প্রমানবহন করে (ছবি সংযুক্ত )

মালদ্বীপ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ২০১৪ সালে ইস্কান্দার স্কুলে জাতীয় শোক দিবস পালনের আয়োজন করেছিলাম । সে অনুষ্ঠান করতে দেয়নি হেড অফ দি চ্যাঞ্চেরী হারুন অর রশিদ।

আমি মালদ্বীপের মহামান্য প্রেসিডেন্ট ডঃ ইয়ামীন মাওমুনের একটি অনুষ্ঠানে তাঁর সামনেই ছিলাম।

হঠাত একটি ফোন এলোঃ
*******************
ঃহ্যালো আমি হেড অফ দি চ্যাঞ্ছেরী হারুন অর রশিদ বলছি;
ঃকে মুক্তি সাহেব বলছেন?
ঃজ্বি
ঃশুনেছি আপনি ১৫ই আগষ্ট পালন করছেন আপনার ইস্কান্দার স্কুলে?
ঃজ্বি আমার সব অনুষ্ঠান তো ইস্কান্দার স্কুলেই হয়ে থাকে।
ঃআপনি এ অনুষ্ঠান করতে পারবেন না; ঐ দিন হাই কমিশন থেকে অনুষ্ঠান করা হবে সূতরাং আপনার অনুষ্ঠান বন্ধ করতে হবে;
ঃআমি এ মুহূর্তে কথা বলতে পারছি না; আমি প্রেসিডেন্টের সামনে কাজেই পড়ে কথা বলছি;
ঃআপনি বুঝতে পারছেন তো যে হাই কমিশন আপনাকে কল করেছে?
******************
মালদ্বীপের রাজধানী মালে ইস্কান্দার স্কুলে আমি মুক্তি যে হলটিতে পররাষ্ট্র প্রতি মন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রবাসী কল্যান ও জনশক্তিমন্ত্রী ইঞ্জিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন দেরকে সংবর্ধনা দিয়েছি, সে হলেই আয়োজন করেছিলাম জাতীয় শোক দিবস ২০১৪।

সে অনুষ্ঠানের অপরাধেই আমার মালদ্বীপের সোনালী দিনগুলো ১৫ই আগস্টের চেয়েও ভয়াবহ করে তুলেছিল এই হারুন অর রশিদ, হেড অফ দি চ্যাঞ্ছেরী এবং সাবেক হাই কমিশনার রিয়ার এডমিরাল আওয়াল।
********
মালদ্বীপে আমার হাতে গড়া আওয়ামী লীগের ছেলেদের ভয় ভীতি দেখিয়ে দেশে পাঠিয়ে দিয়ে আমাকে পঙ্গু করে দেয়া হল। তারপরেও হারুন অর রশিদ সাহেবের খায়েশ মিটেনি। সে মালে অবস্থানরত তার পোষা দালাল আদম ব্যবসায়ী, গাঞ্জা ব্যবসায়ী, ডলার ব্যবসায়ীদের একটি গ্রুপ নিয়ে চলে এবং সীমাহীন দুর্নীতি লুটপাট করে বেড়ায়। এখানে অতিরঞ্জিত কিছুই লিখছি না। প্রমান সহই দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রেরণ করেছি আমি তদন্ত চাই। অতি সম্প্রতি সে ঐ একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছে। আমাকে টেলিফোনে মারধর করার হুমকি দিয়েছে। বিষয়টি মালদ্বীপ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।

মালদ্বীপ দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন হয়ে গেল। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে বাংলাদেশ দূতাবাস গত ২১শে ফেব্রুয়ারি এবং স্বাধীনতা দিবসে একজন ভারতে প্রশিক্ষণ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা, জাতীয় কন্ঠশিল্পী ও মালদ্বীপ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মালদ্বীপ সরকারের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিক্ষক (আমি নিজে ), একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মালদ্বীপে কর্মরত ৩৩ বছরের সিনিয়র ফিজিক্সের শিক্ষক আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মীর সাইফুল ইসলাম এবং আর একজন ২৫ বছর যাবত মালদ্বীপে শিক্ষকতায়রত গজল সঙ্গীত শিল্পী মালদ্বীপের অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সর্বজনবিদিত শিক্ষক মোঃ শফিকুল ইসলাম। 
এই তিন জন শিক্ষকের কাউকেই মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মালদ্বীপস্থ দূতাবাস নিমন্ত্রণ করেন নি। বিষয়টি মালদ্বীপের মন্ত্রণালয় ও প্রেসিডেন্ট হাউসের কর্মকর্তাদেরও নজরে এসেছে। এ দেশে বাংলাদেশী এই তিনজন শিক্ষকই অত্যন্ত দক্ষতার কারনে এবং বিশেষ করে শফিক ও আমি গানের কারনে প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে কোন মন্ত্রী, ধনিক ব্যবসায়ী, বর্ণাঢ্য বণিক শিল্পী ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার কেউ নেই যে আমাদের এই তিনজনকে না চিনেন বা না জানেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে স্বাধীনতা দিবসে আমন্ত্রণ না করার হেতু একটাই হতে পারে যে দেশ আজো স্বাধীন হয়নি অথবা এই দূতাবাস পাকিস্তানের অথবা এই দূতাবাসে মহান স্বাধীনতার স্বপক্ষের কোন কর্মকর্তা কর্মচারী নেই।

মহান স্বাধীনতা দিবসে কেন আমাদের দূতাবাস নিমন্ত্রণ করেনি? আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিভাগীয় মাননীয় মন্ত্রী হিসেবে আপনাকে অবহিত করলাম।
আমরা জাতীয় সম্পদ। আমাদেরকে জাতীয়ভাবেই অপমান করা হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই। কারন জানতে চাই।

মহানুভব, পররাষ্ট্রনীতি ও কুটনৈতিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাত আপনার সমগ্র জীবনের লব্ধ অভিজ্ঞতা আজ পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রশাসনিক জটিলতা সমস্যাদি সমাধান ও বিদেশের সাথে পারস্পরিক সুসম্পর্ক স্থাপনে আপনার সততা শ্রম ও সফলতার সূত্র ধরেই আজ সুবিচারের প্রত্যাশায় আপনাকে অবহিত করলাম। যদি বাংলাদেশ সরকার মনে করে আমি বাঙ্গালী নই, বাংলাদেশী নই-আমার পাসপোর্ট বাংলাদেশ সরকার জব্ধ করতে পারে, আমার কোন আপত্তি নাই। কিন্ত এ অপমানের বোঝা নিয়ে বাঙ্গালী হিসেবে আর মালদ্বীপে পরিচয় দিতে চাইনা। প্রয়োজনে পাসপোর্ট পুড়িয়ে শরণার্থী হয়ে যাবো যেমনটি হয়েছিলাম ১৯৭১ সালে ভারতে আশ্রয় নিয়ে।
ভালো থাকুক দেশের মানুষ ভালো থাকুক শেখ মুজিবের নিরস্পেষিত নির্যাতিত লাঞ্ছিত বঞ্চিত অবহেলিত চির দুখি চির সংগ্রামী বাঙ্গালী জাতি।
আল্লাহ আপনার ভালো করুন;
দেশ আরো এগিয়ে যাক, আরো উন্নয়ন ঘটূক, উত্তরোত্তর বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ খ্যাত স্বীকৃতিকে ডিঙ্গিয়ে উন্নত দেশের তালিকায় লিপিবদ্ধ হোক;

জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু
আপনার একান্ত ভক্ত অনুরাগী
মোকতেল হোসেন মুক্তি
বীর মুক্তিযোদ্ধা জাতীয় কন্ঠশিল্পী
সিনিয়র সঙ্গীত শিক্ষক
ইস্কান্দার স্কুল মালে, মালদ্বীপ

Saturday, March 24, 2018

মোজাম্মেল হক ও আহাদ চৌধূরীগং

ধরে নিলাম 'লালবই' বোখারী শরীফের মতই সহি কিতাব, তাহলে হাজার হাজার আসল মুক্তিযোদ্ধা বাদ গেল কেন? ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা না হয় স্থানীয় নেতা মন্ত্রী বা কমান্ডারদের দুর্নীতির কারনে হয়েছে; বাদ কেন যাবে? মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এতগুলো কর্মকর্তা কর্মচারী কি গরুর ঘাস কাটার জন্য বেতন দেয়া হয়?
ক। মন্ত্রণালয় খ। কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল গ। জামূকা ঘ। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাষ্ট , আর কতগুলি সংস্থা লাগবে মাত্র হাতে গোনা ৩ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধার সঠিক তালিকা প্রণয়ন করতে? জনগণকে মূলা দেখাচ্ছেন আহাদ চৌধূরী আর মোজাম্মেল হক সাহেবগণ?
মন্ত্রণালয়/ কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল আর জামূকার অফিসের এ/সি রুমে বসে টাকা পকেটে ঢুকাতে বড় মজা না? সারা দেশের কোথায় কোন গ্রামে কোন ইউনিয়নে কোন থানার কোন হতভাগা মুক্তিযোদ্ধা পয়সা দিতে পারে নাই বা সময়মত কমান্ডারকে খুশি করতে পারে নাই অথবা দেশে ছিলনা; তাদের খোজ খবর নেবার কোন ব্যবস্থা করেছিলেন আহাদ চৌধূরী সাহেব? বঙ্গবন্ধুর নাম ভাঙ্গিয়ে আপনি আর মোজাম্মেল হকরা কত দিন খাবেন? ৭২ ৭৩ ৭৪ থেকে আপনাদের শিক্ষা নেয়া উচিত। মনে রাখা উচিত গাজী গোলাম মোস্তফার কম্বল চুরি বিশ্বের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠত্ব পেয়েছিল; বঙ্গবন্ধুকে ডুবাতে ঐ একটি কম্বলই যথেষ্ঠ ছিল ঠিক তেমনি শেখ হাসিনাকে ডূবাতে আপনাদের মুক্তিযুদ্ধের তালিকাই যথেষ্ঠ।
যে দেশের প্রশাসন বা সরকার সামান্য ২ লক্ষ বা ৩ লক্ষ আসল মুক্তিযোদ্ধা খুজে বেড় করতে পারে না বা সঠিক নির্ণয় নির্ধারণে ব্যর্থ, তাদের তো ক্ষমতায় থাকার কোন অধিকার নেই; তারা জামাত বি এন পি জোটের থেকে কোন অংশে কম নয়।
দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা প্রতিমাসে বেতন দিয়ে রাখা এতো বাহিনী থাকতে ( এসবি/ডিবি/সি আই ডি/এন এস আই/ পুলিশ/আনসার/ র‍্যাব/ সেনাবাহিনী/ নৌ বাহিনী/ বিমান বাহিনী /দুদক) সঠিক তদন্ত করে আসল মুক্তিযোদ্ধাদের নামের সামান্য ক্ষুদ্র একটি তালিকা প্রণয়ন করতে যে জাতি পারে না; তাদের মূখে বড় বড় লম্বা সুদীর্ঘ চাপাবাজি, মাইক ফাটিয়ে জনতাকে প্রতারনা ভেলকী মিথ্যাচার; প্রতিদিন এক এক নতুন আইন/বিধি জারি করে নিরীহ গরীব হতদরিদ্র্য দীনহীন অশিক্ষিত বয়োবৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানি করতে আহাদ চৌধূরী আর আকাইম্মা মোজাম্মেল হকদের লজ্জা করে না?
আল্লাহ তায়ালা কি ইমান আমান বলে কিছুই ওদের দেয়নি? হে আল্লাহ এই ভন্ড প্রতারক মিথ্যাবাদী চাটূকর দুর্নীতিবাজ স্বার্থান্বেষী জনতার প্রতিনিধি হিসেবে জাতিকে বিভ্রান্ত করছে'তুমি মহা মহিন হে পরোয়ার দিগার, তুমি বিচার কর; তুমি এদের হেদায়েত কর; রক্ষা কর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সোনার বাংলার চির নিস্পেষিত লাঞ্ছিত বঞ্চিত অবহেলিত নির্যাতিত বাঙ্গালীদের । রক্ষা কর শেখ হাসিনা/রেহানাকে, রক্ষা কর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলার মানচিত্র ও লাল সবুজ পতাকাকে ।

Sunday, July 23, 2017

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেমুক্তির খোলা চিঠিঃ

come to mukthi and learn the truth
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেমুক্তির খোলা চিঠিঃ 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি বিশেষ্য বিশেষন দিয়ে তোষামোদি করতে জানিনা। তাই সরাসরি আমার কিছু না বলা কথা এবং কিছু হতভাগা মুক্তিযোদ্ধাদের করুন ইতিহাস আপনার সদয় অবগতির জন্য মিডিয়ার সাহায্য নিতে বাধ্য হলাম।
আপা, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুজিবনগরে প্রশিক্ষণ নেয়া যোদ্ধা।
স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ২রা মার্চ জাতিরজনক বংগবন্ধু/বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজুদ্দিন আহমেদ একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই ১০ মিনিটের নির্দেশে ভূমি মন্ত্রণালয়ে চাকুরী প্রদান করেছিলেন। ৭ দিন কি ৮ দিন পায়ে হেটে না খেয়ে মুজিবনগরে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম একটি স্বাধীন সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নেশায়।
 এ নেশা সাড়ে সাত কোটি মানুষের রক্তে মাংসে অস্তিত্বে মগজে সেলের মত বিধেছিল ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ "পশ্চিমা হানাদার বাহিনীর হাত থেকে বাংলাকে মুক্ত করতে হবে"
 জাতিরজনকের এই উদাত্ত আহবানে সারা দেয়া কী ভুল সিদ্ধান্ত ছিল? তাই আমি মুক্তিযোদ্ধা। নামবিহীন অস্তিত্ববিহীন মুক্তিযোদ্ধা! নাম বদলে দিলাম। মোঃ মোকতেল হোসেন থেকে নাম বদলে হয়ে গেলাম মোকতেল হোসেন মুক্তি।
পরবর্তীতে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু ১৩ই এপ্রিল ১৯৭২ সালে মন্ত্রী পরিষদ গঠন করে প্রধানমন্ত্রী হলে মাদারীপুরের কৃতি সন্তান মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক খাদ্যমন্ত্রী প্রয়াত ফনি ভূষন মজুমদারের অনুস্বাক্ষরে বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবীল থেকে এক হাজার টাকার অনুমোদন (মাদারীপুর মহকুমা প্রশাসক অফিসে) এবং ৩ বান ঢেউ টিন প্রদান করেন।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীদের রেকর্ডে একজন মুক্তিযোদ্ধার কোটায় আমার চাকুরী হয়েছিল। স্বাধীন বাংলাদেশের সচিবালয়ে আমিই ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রথম নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী ছিলাম। আমার ডিউটি ছিল জননেত্রী শেখ হাসিনার ফুফা, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি, সাবেক চীপ হুইপ আলহাজ্ব হাসনাত আব্দুল্লাহ সেরনিয়াবাত এর গর্বিত পিতা, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনি ভাইয়ের শ্বশুর, সাংসদ ব্যারিষ্ঠার তাপসের নানা সাবেক কৃষক লীগের সভাপতি ভুমি মন্ত্রী ও পরবর্তীতে পানি সম্পদ মন্ত্রী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায়।
ইতিহাসের ঘৃণ্য কালো অধ্যায় ১৫ঈ আগস্টের মধ্যযূগীয় বর্বর হত্যাকান্ডের লাশ দেখে আমি পাগল হয়ে যাই। পিজি হাসপাতালে আমার ৩ মাস চিকিতসা চলে এবং সে তিন মাসের বেতন ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তন করে। এ কথা সকলেই জানেন।
আমি ভারতের প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। আমার ঘরের সব কাগজপত্র আমার ভাইদের শিক্ষার সনদ, জমির দলিল দস্তাফেজ সমূহ সব মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ছিড়ে ফেলি। আমার পরিবারের সব আমি ধংস করে ফেলেছিলাম। ভুমি মন্ত্রনালয় তার প্রমান।
আমি মন্ত্রীকে এসব কথা বলাতে আমাকে অপমান করতে পারেন না। আমি প্রবাসে থাকি। আমাকে আবেদনের সুযোগ না দিয়ে অপমান করার অধিকার মন্ত্রীর নাই। তিনি আমার দরখাস্ত গ্রহন করা ও না করার অধিকার রাখেন কিন্তু মেজর জেনারেল সুবিদ আলীর নির্দেশে  আমাকে অপমান করতে পারেন না। তিনি আমার আবেদনে লিখেছেন
“যেহেতু আবেদনকারী বহুবার দেশে এসেছিলেন এবং আবেদন করেন নি তাই তার আবেদন গ্রহন করা গেল না”
তিনি মেজর জেনারেল সুবিদ আলীর শিখানো কথা মত বললেনঃ ৪৫ বছর পরে মুক্তিযোদ্ধা হতে এসেছে। বের করে দেন”। 
আমি মুক্তিযোদ্ধাই নই, একজন সক্রিয় আওয়ামি যোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া আমার জীবনে অন্য কোন বিষয় কাজ করেনি এবং এ মুক্তিযুদ্ধ বংগবন্ধ ও আওয়ামী লীগই আমার ধ্যান ধারনা চিন্তা চেতনা আদর্শ এ কথা প্রমান করে আমার ৬০ হাজার প্রায় লীফলেটস, ব্যানার ও পোষ্টার এশিয়ায় ইন্টারনেট চালু হবার পর থেকেই কার বিনা প্ররোচনায় করে এসেছি। শুধু তাই নয় আমি ২০০ ওয়েব সাইট ও ব্লগ মেইনটেইন করি যা’শুধু যুদ্ধাপরাধী মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ সংক্রান্ত। এ সকল ছবি ও ব্লগ/ওয়েবসাইটগুলোই প্রমান করে যে আমি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রীতিমত একজন বদ্ধ উন্মাদসম গবেষক।Just write my name on the google search engine where you’ll get real Identity of mine “write Moktel Hossain Mukthi or muktimusician.এ ছাড়াও আমি একজন একনিষ্ঠ অনলাইন আওয়ামী যোদ্ধা। মালদ্বীপের বঙ্গবন্ধু পরিষদ এবং আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, মালদ্বীপের মাটিতে আমিই সর্ব প্রথম মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু এবং পাকিস্তানের ৩০ লক্ষ বাঙ্গালী হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য জনসভায় বক্তৃতা প্রদান করে পাকিস্তান হাই কমিশনের মামলা খাওয়া একজন মালদ্বীপ সরকারের শিক্ষক।
 মন্ত্রী মহোদয় এ সব পরিচয় জানার পরেও বলেন নি যে আপনি বসেন বা কিছু বরং তাঁর আচার ব্যবহার এতই রুঢ় ছিল যা’ শিবির বা জামাতের কারো সাথে করছেন বলে অনুমেয়। আমার সাথে ভদ্র ভাষায় কথাও বলেন নি। এক পর্যায়ে জেনারেল সুবিদ আলীর কথায় তিনি আমাকে ঘাড় ধরে তাঁর কক্ষ থেকে বেড় করে দেয়ার কথা বলেন এবং অতঃপর.........।।
তিনি মন্ত্রী না হলে হয়তো সেখানেই কোন দুর্ঘটনা ঘটে যেতো। আমি আমার নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে চলে আসি।
আমার সহযোদ্ধারা এখনো অনেকেই বেচে আছেন। ড: গোলাপ আমার সাথের একই ক্যাম্পের যোদ্ধা। আওয়ামি যোদ্ধা। 
মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী সব সময় প্রচন্ড মিথ্যা কথা বলেন। যা' মিডিয়া ও বক্তৃতায় বলেন, বাস্তবের সাথে তার কোন মিল নেই; তিনি যা বলেন সব মিথ্যা কথা মিথ্যা তথ্য। এখনো বহু আসল মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকাভুক্ত করতে পারেনি অথচ তিনি বক্তৃতায় ঘোষনা করলেন সকল জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের কথা রেকর্ড করা হবে। আসল অনেক মুক্তিযোদ্ধার নামই সংগ্রহ করতে পারেন নি-তিনি কিভাবে এ ঘোষনা প্রদান করেন?
তার দেয়া সব তথ্য জাতিকে বিভক্ত করছে; মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কলঙ্কিত হচ্ছে। নতুন তালিকা প্রণয়নের নামে এগুলো প্রতারণা। মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী মিথ্যাচার করছেন। মিডিয়া, দেশবাসী এমন কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে প্রতারণা করছেন । দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উপজেলা ও জেলাসমূহে যে দুর্নীতি চলছে, যে সনদ ও মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ের নামে ব্যবসা বাণিজ্য শুরু হয়েছে তাতে আওয়ামী লীগের বিগত বছরগুলোর সকল সফলতা এমন কি মহান মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের যে অবদান সব মলিন হয়ে যাবে এই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীদের মত স্বজনপ্রীতি দুর্নীতি গ্রস্থ নেতা/কমান্ডারদের কারনে।
কারন আপনি আদর্শিক কারনে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষন ও মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ন করছেন।  সমস্ত মন্ত্রী এম পি দের তৃনমূলের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। ক্ষমতা ও অর্থ সম্পদ শালী মধ্য শ্রেণীর নেতা যার মধ্যে অর্ধেকই প্রায় জামাত শিবির ও বি এন পি, তাদের সাথে তাল মিলিয়ে, হাত মিলিয়ে আমার মত পাগল ছাগল নিবেদিত ত্যাগি সৎ নিষ্ঠাবান অভিজ্ঞ উচিত কথাবলার প্রকৃত মুক্তিসেনাদের এভাবেই তারা অপমান তাচ্ছিল্য করে দূরে সরিয়ে রাখে। যে কারনে ছাত্রলীগের ছেলেদের সেনাবাহিনী নৌ বাহিনী বিমান বাহিনী পুলিশ বিজিবি ও অন্যান্য সরকারী ভালো পদে চাকুরী হয় না।
কারন ওরা ত টাকা দিতে পারবে না। দলীয় ছাত্র লীগের ছেলেদের নিকট টাকা চাইতেও পারে না; যদি আবার নেত্রীকে বলে দেয় বা জানিয়ে দেয়। তাই গোপনে আওয়ামী লীগের নেত্রীর বিশ্বাসী নেতাগন গোপনে চাকুরী প্রদান করে, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ছাত্রীদের ভর্তির সুপারিশ ও তদবীর করে জামাত বি এন পির ছেলে মেয়েদের । কারন টাকা পাওয়া যাবে।
 উত্তরা ও এয়ারপোর্ট থানা এলাকায় আমার বাস। আমার জানা মতে ঠিক আমারই মত ত্যাগি জীবনবাজী রেখে নৌকার জন্য ভোট সংগ্রহ কারীর একটি মেয়েকে বঙ্গ মাতা স্কুলে ভর্তির জন্য কি না করেছে? মায়া ভাই পর্যন্ত বিষয়টি জানতেন। সে মেয়েটি সুযোগ পায়নি; দেখা গেছে-ঢাকা এয়ারপোর্ট ও বিমানে চাকুরীরত জামাত বি এন পির ছেলে মেয়েরা অজানা রহস্যের কারনে সবাই সুযোগ পেয়ে গিয়েছে।
 এর নাম স্বাধীনতা? মুক্তিযুদ্ধ? আওয়ামী লীগ?
 এত সে বঙ্গবন্ধুর নৌকা ডুবানোর দুরদন্ত শয়তানী মাঝি খন্দকার মোস্তাক আহমেদ, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, চাষী মাহবুবুল আলম, নূরুল ইসলাম, কে এম ওবায়দুর রহমান তাহের উদ্দিন ঠাকুরদের চেয়ে একটূ কম নয়।
আমিই হলাম বাঙ্গালী জাতির মধ্যে সবচেয়ে কুলাঙ্গার। ধিক্রিত অবহেলিত লাঞ্ছিত মূর্খ বেয়াকুপ বেয়াক্কেল আহাম্মদ বোকা গাধা । না পারলাম প্রাণ খুলে হাসতে না পারলাম দুটি কন্যা সন্তানকে প্রাণ খুলে হাসতে। কি লাভ হল? এ স্বাধীনতায়? যে স্বাধীনতা আমার অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দেয় না; সে স্বাধীনতাকে আমি কেন স্বীকৃতি দেব? রাষ্ট্রই যদি আমাকে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়, আমি কেন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবো? কেউ দেবে না। এটাই নিয়ম, এটাই লজিক। জানি আমি এতে হবো রাষ্ট্রদ্রোহী। তাও মন্দ কী? একটা কিছু ত হবো? আওয়ামী লীগের একজন মন্ত্রী একজন মুক্তিযোদ্ধাকে ঘাড় ধরে বেড় করে দেয়?? এ স্বাধীনতার অর্থ কী? কেন পেলাম? কি আশায় স্বাধীন হলাম? কিসের নেশায় নৌকা নৌকা মুজিব মুজিব করে জীবনের শেষ অবস্থানটুকুকে ধূলিসাৎ করে দিয়ে নির্বাসিত হলাম এই দ্বীপ রাজ্য মালদ্বীপে । ভুল কোথায়? ভুল তো আছেই হয়তো জানিনা জীবনের কোথায় কোন সিদ্ধান্তে বড় রকমের ভুল ছিল। তাই ভুলের মাশুল দিয়ে গেলাম ৬৫ বছর বয়সের মুক্তিযোদ্ধা মোকতেল হোসেন মুক্তি।
ভুল তথ্য দিচ্ছেন। এর সমাধান চাই। এর একটি পরিস্কার ব্যাখ্যা চাই; সত্যের জয় হবে; তাই চাই; জাতিরজনকের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ ক্ষমতায় থেকে বঙ্গবন্ধুর সৈনিকদের নিয়ে রঙ তামাশা করবে; মুক্তিযোদ্ধা নির্ধারণের নামে ব্যবসা করবে, এর জন্য যুদ্ধে যাইনি, এর জন্য ৩০ লক্ষ বাঙ্গালী শহীদ হয়নি; এর জন্য ২ লক্ষ ৪০ হাজার মা বোনের ইজ্জত হারায়নি। আসল মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাই করতে ব্যর্থ মোজাম্মেল হক।
এই মিথ্যাচারের জন্য আল্লাহ্‌ বিচার করবেন রোজ হাসরের দিন। মহান আল্লাহর বিচারে কারো হাত নেই। আল্লাহর উপরে কোন মন্ত্রী নেই; আল্লাহর উপরে বিচারক নেই; রোজ হাসরের থেকে শক্তিশালী ক্ষমতাবান কোন আদালত নেই। বহু আসল মুক্তিযোদ্ধা এখনো তালিকার বাইরে এবং এ সমস্যা আগামী ১০০ বছরেও কোন সরকার সমাধান করতে পারবে না। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের কথা রেকর্ড হবে ।
মন্ত্রী নিজেও জানে না যে উপজেলা জেলা গুলোতে এই তালিকা নিয়ে কি পরিমান টাকার ছাড়াছড়ি চলছে? কি পরিমান ব্যবসা করছে নব্য থানা কমান্ডারগণ। এমন কোন উপজেলা নেই যেখানে সত্যকারের মুক্তিযোদ্ধা বাদ পড়ে নাই এবং ভূয়া মিথ্যা তথ্য প্রদানকারী মন্ত্রীর ক্ষমতা বলে নয়তো এম পির ক্ষমতা বলে অথবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ক্ষমতা বলে নতুন তালিকায় নাম লিখিয়েছে। এমন প্রমান আমার গ্রামে আমার ইউনিয়নে রয়েছে। আমি ত অন্যের ক্কথা শূনে এ সব লিখিনি ভাই।ফুরিয়ে যাচ্ছে ৭১ এর সোনার ছেলে মেয়েরা, বেচে থাকবে শুধু ৭১ এ জন্ম নেয়া নব্য মুক্তিযোদ্ধারা, যারা লক্ষ টাকায় মুক্তিযুদ্ধের সনদ কিনে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে। আমরা মুজিবনগরে (ভারতে) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা এর চেয়ে বড় পরিচয়ের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ডঃ আব্দুস সোবহান গোলাপ ভারতের চাদপাড়া এবং পরবর্তীতে ব্যারাকপুর মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ শিবিরে প্রশিক্ষণ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা এবং আমরাও একই সময়ে একই শিবিরে একই কমান্ডারের অধীন প্রশিক্ষণ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা। ডঃ আব্দুস সোবহান গোলাপের নাম যদি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তালিকায় থাকতে পারে, তবে আমাদের নাম থাকবে না কেন? শুধু আমরা নই, সারা বাংলাদেশে বহু অখ্যাত অপরিচিত অশিক্ষিত অজো পাড়া গায়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বহু প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম এখনো তালিকাভুক্ত হয়নি। বহু মুক্তিযোদ্ধা ইতোমধ্যেই পরলোকগমন করেছেন, কোন স্বীকৃতি ও সুযোগ সুবিধা ভোগ না করেই তারা চলে গেছেন বাঙ্গালী জাতিকে মহান স্বাধীনতা প্রদান করে। তাদের নাম কে তালিকাভুক্ত করবে? কেন একটি সঠিক তদন্ত কমিটি কর্তৃক সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা হয়নি? এ প্রশ্ন সরকার ও দেশবাসীর কাছে। আমরা মনে করি মহান মুক্তিযুদ্ধের নেত্রিত্বদানকারী দল হিসেবে জাতিরজনক বংগবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকারের এ মহান দায়িত্ব মুক্তিযোদ্ধাদের জীবদ্ধশায় সম্পন্ন করা উচিত। সবাই শেয়ার করুন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সত্যিকারে শ্রদ্ধা থাকে।
 আমার সার্টিফিকেট দরকার নাই। কোন ভাতার দরকার নাই। আপনি মুসলমান দাবী করলে আমি কেন করবো না? আমিওত নামাজ পড়ি? মন্ত্রী আমাকে অপমান করতে পারে না। তার চেয়ে আওয়ামী লীগের জন্য আমার অবদান সেই ৬৯ থেকে অদ্যাবধি তিল পরিমান কম নয়; বঙ্গবন্ধু আমাকে চাকুরী দিয়েছিলেন সচিবালয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। অমুক্তিযোদ্ধা ভাতা পায় এবং তা আওয়ামী লীগের আমলে এবং আওয়ামী লীগের মন্ত্রীর স্বাক্ষরে কেন? আমার কি ইচ্ছে করে না যে আমার সন্তান মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হোক। আমার সন্তানের কি ইচ্ছে করে না, তার বাবা মুক্কতিযোদ্ধা এ কথা অন্য দশজনের নিকট বলে গৌরব বোধ করতে? মন্ত্রীর ইচ্ছে মত চলতে পারে না; এ সব তথ্য নেত্রীর জানা দরকার। দেশ আজ কোন পথে যাচ্ছে? শেখ হাসিনা কি করতে চাচ্ছেন? আর তার সাঙ্গ পাংগ মন্ত্রী আমলারা কি করছনে? আওয়ামী লীগ কে এরাই ডুবায় আর বাংলার নিরিহ মানুষ খেসারত দেয়। আমার মাদারীপুরের আমার সহযোদ্ধা ভারতে প্রশিক্ষণ নেয়া মুক্তিযোদ্ধারা কেন তালিকায় এলো না? মন্ত্রী শাহজাহান খান সভাপতি, সেখানেও দেখলাম সব মিথ্যাচার সব ভন্ডামী ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে তিনি হেসে হেসে গল্প করছেন আর কাগজ স্বাক্ষর করছেন। যারা ৭১ সালে জুন মাসে আমাদের লেফট রাইট দেখে পিটি প্যারেড দেখে টিটিকিরি দিয়েছে, তারা এসেছে মুক্তিযোদ্ধা দাবী করতে এবং মন্ত্রী স্বাক্ষর করে দিলেন? দীদার ভাই@ আল্লাহ্‌র কছম, আমার সন্তান যদি আমাকে বাবা না বলে আমি সন্তান বলবো না, আমার পিতা মাতা আমাকে সন্তান হিসেবে স্বীকার না করলে আমিও করবো না। মহান স্বাধীনতা যদি আমাকে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি প্রদান না করে আমি কেন স্বাধীনতাকে মেনে নেবো? দেশ স্বাধীন করেছি আমরা, ফসল খাবে নবাগতরা; যে সংজ্ঞা আপনি একজন মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেন, সেটা আপনার ব্যাপার। আমি মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করেছি, দেশ স্বাধীন করেছি; আমি বিজয়কে স্বাধীনতাকে মেনে নিয়েছি স্বীকার করেছি; আপনি স্বাধীনতা; আপনাকেও মেনে নিতে হবে আমি মুক্তিযোদ্ধা। নইলে ত দেশ স্বাধীনই হয়নি। স্বাধীনতা যদি আমাকে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকার না করে, আমি কেন স্বাধীনতাকে স্বীকার করবো? আমার অনেক কষ্ট অনেক দুঃখ । সে ১৫ই আগষ্ট থেকে দাউ দাউ করে জ্বলছি। কেউ জানেন না। নেত্রী কিছুটা জানেন। আমি মন্ত্রীকে দেখাবো, তিনি কি করবেন? ক্রস ফায়ার দেবেন, তাতে আমি আরো বিখ্যাত হব; বিশ্ব জানবে শেখ হাসিনার সরকারের উগ্র মেজাজী রগচটা মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাকে ক্রস ফায়ার দিয়ে মেরেছে। আমার সন্তানেরা আমার লাশ নিয়ে মিছিল করবে; আমি হব আরো জনপ্রিয়। এর পরেও আওয়ামী লীগ করি; কারন ওটা রক্তে অস্তি মজ্বজায় মিশে গেছে।
আজ যারা কালকিনিতে কমান্ডার বলে খ্যাত, এদের অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা নয়; এমন কি আমার ইউনিয়ন বাশগাড়ীর সকল মুক্তিযোদ্ধাদের আমার চেয়ে ত অন্য কেউ বেশী চিনে না, জানে না; এমন কি বাছাই কমিটির সভাপতি নৌ মন্ত্রী মোঃ শাহজাহান খানও তাদের চিনেন না। বিগত ১৮ই ফেব্রুয়ারী কালিকিনিতে বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই বাছাই হল। আসল মুক্তিযোদ্ধারা এমন কি ব্যারাকপুর মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ কালীন কমান্ডার হানিফ মাহমুদ ( নিউজিল্যান্ড প্রবাসী ) এর নামও তালিকায় নেই যিনি চাদপাড়া রিসিপশন ক্যাম্পের সহকারী ইনুচারজ ছিলেন। হায়দার বেপারী যিনি স্বাধিনতাত্তোর বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এবং ৭১ সালে চাদপাড়া ক্যাম্পের ইনচারজ মাদারীপুর কালকিনি ৩ আসনের প্রথম এম পি (এম সি এ) বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম এডঃ মতিউর রহমান (মতিভাই) র সাথে তার বাসায় থাকতেন এবং ক্যাম্প অফিসের কাজ করতেন। তার দরখাস্তও মাননীয় মন্ত্রী গ্রহন করেন নি;
বড় কষ্ট পেয়েছি; যারা মুক্তিযোদ্ধা নয়; তাদের সাথে মন্ত্রী মহোদয় হেসে কথা বললেন-গল্প করলেন, তাদের কাগজপত্র স্বাক্ষর করলেন আর যে আসল মুক্তিযোদ্ধা তাকে ফিরিয়ে দিলেন; সে কাদতে কাদতে ফিরে গেল; এ দুঃখজনক ঘটনা বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান খানের দ্বারা সংঘটিত হওয়ায় অবাক বিশ্বয়ে তাকিয়ে ছিলাম এবং লাল বই তে আমার নাম না থাকা সত্বেও আমি কথা বলেছিলাম। ওদের সমর্থন করেছিলাম।
মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিশেষ করে যারা বঙ্গবন্ধুর অবদানকে অস্বীকার করেছে এবং এখনো করছে, তারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সকল সুযোগ সুবিধা পাবে, তাও আবার আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাকালীন এবং আপনার মত মাদারীপুর কাপানো আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর সামান্য ভুলের কারনে? এটা ঠিক কিনা? আপনি নিজেই অনুধাবন করুন। আমরা আপনার সুবিবেচনা সুবিচারের প্রত্যাশায় অধির আগ্রহে বসে থাকলাম।
তাছাড়া আঞ্চলিক সমস্যা গুলো আপনি সরাসরি না জেনে কিভাবে সমাধান করবেন? এ মহৎ কাজটি আপনার দ্বারাই সম্পন্ন করতে হবে। সে কারনে বর্তমান বাছাই পদ্ধতি সংস্কার করে পরিবর্তন করে সম্পন্ন করতে হবে। 
ভারতে প্রশিক্ষন নেয়া আমার সহযোদ্ধা অনেকেই আর বেচে নেই; তাদের পরিবার বঞ্চিত হল মহান স্বাধীনতার ফসল থেকে। এ কাজ যারা করেছে, তারা তাদের ইচ্ছে মত অর্থ নিয়ে ৭১ এর স্বাধীনতা বিরোধীদের নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় লিখে দিয়েছে। যে সমস্যা মাদারীপুরের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের কলুষিত করছে, সে সমস্যা কেন্দ্রীয়ভাবে সমাধান হবার নয়; যার যার জেলা উপজেলায়ই সমাধানযোগ্য।
আমার মুক্তিযোদ্ধা হবার সখ নেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ঐ আসল মুক্তিযোদ্ধা হতভাগাদের কি হবে? যারা ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের নাম মূখে আনেনি, তারা ভাতা পাচ্ছে, তাদের সংসার ভালো চলছে আর যারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে গেল, যুদ্ধ করলো তাদের নাম নেই; এ কলঙ্ক এ ব্যর্থতা যে কোন ভাবেই হোক আওয়ামী লীগ সরকারের এবং  আপনার উপরই বর্তায় কারন আওয়ামী লীগ মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদান করেছিল।
আপনি আমাদের শেষ ।মহান আল্লাহ্‌ যেনো আপনার দ্বারা কোন ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহনের কলঙ্ক লেপন না করে। আল্লাহ্‌ আপনাকে সঠিক মুক্তিযোদ্ধাদের চিনহিতকরনে সহযোগিতা করুক।
আমরা মুজিবনগরে (ভারতে) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা এর চেয়ে বড় পরিচয়ের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার বিশেষ সহকারী ডঃ আব্দুস সোবহান গোলাপ ভারতের চাদপাড়া এবং পরবর্তীতে ব্যারাকপুর মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ শিবিরে প্রশিক্ষণ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা এবং আমরাও একই সময়ে একই শিবিরে একই কমান্ডারের অধীন প্রশিক্ষণ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা। ডঃ আব্দুস সোবহান গোলাপের নাম যদি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তালিকায় থাকতে পারে, তবে আমাদের নাম থাকবে না কেন?
শুধু আমরা নই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সারা বাংলাদেশে বহু অখ্যাত অপরিচিত অশিক্ষিত অজো পাড়া গায়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বহু প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম এখনো তালিকাভুক্ত হয়নি। বহু মুক্তিযোদ্ধা ইতোমধ্যেই পরলোকগমন করেছেন, কোন স্বীকৃতি ও সুযোগ সুবিধা ভোগ না করেই তারা চলে গেছেন বাঙ্গালী জাতিকে মহান স্বাধীনতা প্রদান করে। তাদের নাম কে তালিকাভুক্ত করবে? কেন একটি সঠিক তদন্ত কমিটি কর্তৃক সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা হয়নি? এ প্রশ্ন আমরা কাকে করবো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী?  আমরা মনে করি মহান মুক্তিযুদ্ধের নেত্রিত্বদানকারী দল হিসেবে জাতিরজনক বংগবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকারের এ মহান দায়িত্ব মুক্তিযোদ্ধাদের জীবদ্ধশায় সম্পন্ন করা উচিত।
আমার লজ্জা করে কাউকে বলতে যে আমাকে মন্ত্রী অপমান করেছে, তোমরা বিচার কর। তাই অনলাইনেই বিচার চাই। মোজাম্মেল আমাকে গায় হাত দেয়নি; মানসিক ভাবে প্রচন্ড আঘাত করেছে, যা'কোটি টাকায় শোধ হবে না; যা' রোজ কিয়ামতের আগ পর্যন্ত আমার অন্তর থেকে মুছবে না। সমাজ সংসার বন্ধু বান্ধব আত্মীয় পরিজন সবাই নিষেধ করছে=মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কিছু না লেখার জন্য; ৭১ সালেও ত আমার মা মুক্তিযুদ্ধের নামে কোথায় গিয়ে মারা যাবো, তাই যাবার জন্য উন্মাদ হয়ে এখানে ওখানে ছটোছুটি করা দেখেই মা'বুঝেছিল, ছেলে আমার ভারতে যাবার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছে; সেই মায়ের নিষেধ অমান্য করে যখন ভারত যেতে পেরেছি; তখন মায়ের উপরে ত আর কোন আত্মীয় হয় না?
 তাই আপনার দেয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ অপমান করলে আপনি জাতিকে কথা দিয়েছেন; প্রতিবাদীদের সাথে আপনি আছেন। আমি আমার এ সংগ্রামে আপনার সমর্থন চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
ঘরের ইঁদুর বাধ কাটলে বাঁধ দিয়ে হয়রান হয়ে যাবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী;
আ ক ম মোজাম্মেল হক কে মন্ত্রী পরিষদ থেকে বরখাস্ত করে জাতিরজনক, মুক্তিযুদ্ধ ও মহান স্বাধীনতার গৌরবকে অক্ষুন্ন রাখুন; আপনার সমস্ত সফলতা মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নের ব্যর্থতার কালিমায় মলিন হয়ে যাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। 


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি মুক্তিযোদ্ধা হতে চাইনা কিন্তু আমার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার দাবী জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী; ওরা গরীব-আমি ইনশাহ আল্লাহ্‌ গরীব নই; অনেক ধন সম্পদ নাম যশ যত সামান্য হলেও আমার দুইবেলা দুই মুঠো ভাত জোটে। কিন্তু নিভৃত পল্লীর অশিক্ষিত হত দরিদ্র্য মুজিব নগরের মুক্তিযোদ্ধা-ওরা মাসের ১০ হাজার টাকা ভাতা পেলে ওদের জীবন কত সুখের হতে পারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী?
যাদের অর্থ আছে, তারাই কমান্ডারদে কিনে নেয়; নেতা নেত্রীদের বাসায় বড় ধরনের উপঢৌকন পাঠায়, তাদের নাম তালিকাভুক্ত হয়ে যায়;
এ দুর্নীতি এ স্বজনপ্রীতি মহান মুক্তিযুদ্ধের জন্য, জাতিরজনকের জন্য আপনার জন্য সর্বোপরি সকল মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদের জন্য কলঙ্কিত অধ্যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। 
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি ভাবিনা এত কিছু একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে লিখবার পরে আমার কি হবে? ১৫ই আগষ্টের চেয়ে ভয়াবহ আর কিছুই হতে পারে না; যে আগষ্ট আমার চোখে দেখা। এতিম কচি খোকার মত ১৫ই আগষ্ট ঢাকার রাজপথে ঘুরে ঘুরে দেখেছি লাশের সমাহার; বদ্ধ পাগল হয়ে তিন মাস জেল খেটেছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী;
তেজগাও থানার এস আই জাতিরজনক কে গালি দেয়ায় গভীর রাতে এফ ডি সি'র সমূখের রেললাইনে পিটিয়ে ১৪ দিন জেল খেটেছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী; আমার হারাবার কিছু নেই; যেমন নেই আপনার। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাদী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ফ ম মোহিত আমার একান্ত ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ও বন্ধু ছিল। ১৫ই আগষ্ট রাতে ৩২ নং বাড়ীতে কর্মরত শহীদ এস আই সিদ্দিকুর রহমান আমাদের কোলকাতায় মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষন দিয়েছিলেন। শুনেছি, তাঁর নামও নাকি মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নেই।
সত্য কথা অনেক সময় মহা সংকট ও বিপদ ডেকে আনে, এ লজিক আমিও জানি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী; আমি আ ক ম মোজাম্মেল হক এর পদত্যাগ চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী;
এর জন্য ইন্টারনেটের কোন বিভাগ আমি বাকী রাখবো না মাননীয় প্রধানমন্ত্রী; আপনার দৃষ্টিতে আমার এ আবেদন কোন না কোন ভাবে পৌছাবেই।

http://narrowpolitics.blogspot.com/
 http://mukthizcreation.wordpress.com/
http://bdawamileague.wordpress.com/
 http://creationofmukthi.blogspot.com
 http://misrulesofbnpjamat.wordpress.com/
 http://sheikhhasina.blog.com/
 http://skhasinawajed.blogspot.com
 http://deshratna.weebly.com
 http://bangladeshstudentleague.blog.com/
 http://daughterofthedemocracy.blogspot.com
 http://bangabandhuporisadmv.blogspot.com
 http://thegreatestbangalee.blogspot.com
 http://theburningnation.weebly.com/
 http://jathirpitha.wordpress.com
 http://skmujiburrahman.blogspot.com
 http://bangabandhu.weebly.com
 http://bangabandhuporisad.webs.com/
 http://bangabandhu.webs.com
 http://august75tragedy.blogspot.com
 http://thefatherofnation.blogspot.com
 http://mujibshena.blogspot.com
 http://bangladeshawamileague.webs.com
 http://worldawamileague.blogspot.com
 http://charterofchange.blogspot.com/
 http://charterofchange2021.blogspot.com/
 http://digitalbangladesh.blog.com
 http://mukthi.tumblr.com/archive
 http://mukthi.tumblr.com/muktimusician
 http://thefutureleaderjoy.wordpress.com/
 http://thefutureleader.webnode.com
 http://jajaborpakhi.blog.com/
 http://moktelhossainmukthi.blog.com
 http://muktimusician.blog.co.in
 http://muktirpata.blogspot.com
 http://muthirpachali.blogspot.com
 http://mukthimadaripuri.blog.co.in
 http://amarmonmanena.webs.com/
 http://mukthi.webnode.com/
 http://muktirpata.weebly.com/
 http://khasherhat.blogspot.com
 http://amramujibshena.blog.com/
 http://muktimusician.blog.com
 http://muktimusician.stumbleupon.com/
 http://muktimadaripuri.blogspot.com
 http://muktimusician.blogspot.com
 http://mukthircollection.blogspot.com
 http://muktimusician.photobucket.com/
 http://muktimusician.wordpress.com
 http://mukthircollection.blogspot.com
 http://moktelhossainmukthi.blogspot.com
 http://freedomfighters71.blogspot.com
 http://misrulesofbnpjamat.blogspot.com
 http://warcrime1971.blogspot.com
 http://khaledaziaandrazakars.wordpress.com
মোকতেল হোসেন মুক্তি
কন্ঠশিল্পী মুক্তিযোদ্ধা
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি
সময়৭১
মালদ্বীপ আওয়ামী লীগ
বঙ্গবন্ধু পরিষদ, মালদ্বীপ শাখা
সাধারণ সম্পাদক
মালদ্বীপস্থ প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটি এসোসিয়েশন
সুরকার গীতিকার ও সঙ্গীত পরিচালক
সঙ্গীত শিক্ষক
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু ।  


Friday, June 9, 2017

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকতে তাঁর সম্পর্কে যত লেখা লিখেছি, তাঁর মৃত্যুর পর সেই লেখার সংখ্যা বহু গুণ বেশি।


gaffar chyএজন্য প্রথমে তিনি আরবান মিডলক্লাস ও পেশাজীবীদের মধ্যে কলোনিয়াল যুগের শ্রেণী বৈষম্য বাকশাল ব্যবস্থায় ভেঙ্গে দিতে চেয়েছিলেন। আমার পাঠকদের মধ্যে যারা প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছেছেন তাঁদের নিশ্চয়ই মনে আছে, আইনজীবীদের মধ্যে চারটি শ্রেণী ছিল। ব্যারিস্টার, এ্যাডভোকেট, প্লিডার এবং মোক্তার। এই পেশায় ব্যারিস্টার ও এ্যাডভোকেটরা ছিলেন অভিজাত, প্লিডার মধ্যম অভিজাত এবং মোক্তারেরা হরিজন শ্রেণী।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকতে তাঁর সম্পর্কে যত লেখা লিখেছি, তাঁর মৃত্যুর পর সেই লেখার সংখ্যা বহু গুণ বেশি। যতই লিখি ততই মনে হয়, তাঁর সম্পর্কে আরও আরও লেখার রয়ে গেছে। যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিনই তাঁর সম্পর্কে লিখতে পারব। এতই বৈচিত্র্যপূর্ণ তাঁর জীবন। তিনি মহাদার্শনিক ছিলেন না, মহাপন্ডিতও ছিলেন না। কিন্তু মহাপন্ডিতরা বা মহাদার্শনিকরা যা করতে পারেননি, তিনি তা করেছিলেন। অর্থাৎ একটি লুপ্তপ্রায় জাতিকে তার ভৌগোলিক ও রাষ্ট্রীয় অস্তিত্ব দান করেছেন এবং তার বিপন্ন সভ্যতা, সংস্কৃতি, ভাষা ও ইতিহাসকে রক্ষা করেছেন।
কথাটা বলেছিলেন, ব্রিটেনের প্রখ্যাত বাম দার্শনিক জ্যাক ওয়াডিস। তিনি বলেছিলেন, ‘বিশ্বে শোষণমুক্ত সাম্যবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার তত্ত্ব প্রচার করেছেন কার্ল মার্কস। কিন্তু তিনি কোন কমিউনিস্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে যেতে পারেননি। সেই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন রাশিয়ায় আইনের ছাত্র লেনিন এবং চীনে স্কুল-শিক্ষক মাও জে দুং। তেমনিভাবে বলা চলে, স্বাধীন অথবা স্বতন্ত্র বাংলার স্বপ্ন সচেতন বা অবচেতনভাবে দেখেছেন অনেকেই; যেমন চিত্তরঞ্জন দাস, সুভাষ বসু, ফজলুল হক, শরৎ বসু, আবুল হাশিম। তাঁরা কেউ বিখ্যাত ব্যারিস্টার ছিলেন, কেউ বিলেতে লেখাপড়া করা নেতা, কেউ বিখ্যাত আইনজীবী, কেউবা বিখ্যাত প-িত ও বাগ্মী ছিলেন। কিন্তু সচেতন বা অবচেতন মনের এই স্বপ্নের বাস্তবায়ন কেউ করে যেতে পারেননি; করেছেন ফরিদপুরের টুঙ্গিপাড়ার একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা শেখ মুজিবুর রহমান। তাই জাতির পিতার শিরোপাটি আজ তাঁকেই ধারণ করতে হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বাধীন করে গেছেন। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষা অনুযায়ী দেশটা গঠন করে যেতে পারেননি। তবে দেশ গঠনের সেই পথে পা বাড়িয়ে তিনি তাঁর স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষার কাঠামোটা জাতিকে দান করে দিয়ে গেছেন। তাঁর নাম বাকশাল-দর্শন। বাংলাদেশে নব্যধনী এবং নব্য এলিট শ্রেণীর সমন্বয়ে পুরনো কায়েমি স্বার্থের (াবংঃবফ রহঃবৎবংঃ) উত্তরাধিকারী নব্য কায়েমি স্বার্থ গোষ্ঠী এই বাকশাল নাম শুনলেই তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে। ড্রাকুলারা যেমন ক্রসচিহ্ন দেখলে ভয় পায়, বাংলাদেশের লুটেরা, সমাজপতিরা এই বাকশাল নাম শুনলে আঁৎকে ওঠে। কারণ এই বাকশাল-ব্যবস্থাটি ছিল পুরনো আমলাতান্ত্রিক শাসন এবং নব্যধনী গড়ে তোলার শ্রেণী শোষণমূলক ব্যবস্থা পরিবর্তনের একটি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপ সফল হলে সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদ এবং নব্যধনীদের সমন্বয়ে গঠিত গণশত্রু জোটের চক্রান্ত থেকে বাঁচতে পারত দেশটি। ১৯৭৫ সালের রক্তাক্ত ঘটনাগুলো আর কিছুই নয়, ছিল নিষ্ঠুর প্রতিবিপ্লব। তাতে শুধু জন প্রতিক্রিয়াশীলেরা নয়, বিভ্রান্ত এবং বিচ্যুত বামদের একটা বড় অংশও সাহায্য ও সমর্থন যুগিয়েছিল। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু মাত্র বাকশাল-ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন। কিন্তু তাঁর বাস্তবতা ও সাফল্য দেখিয়ে যেতে পারেননি। ব্যবস্থাটি প্রবর্তনের মাত্র আট মাসের মাথায়Ñঅর্থাৎ ব্যবস্থাটি যখন এক্সপেরিমেন্টের আঁতুড়ঘরে তখনই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় এবং ব্যবস্থাটি উচ্ছেদ করা হয়। তারপর গত ৩৮ বছর ধরে চলেছে এই আট মাসের অপরীক্ষিত ব্যবস্থার ঢালাও নিন্দাবাদ। বাম এবং ডান উভয় রাজনীতির তরফ থেকে।
বিস্ময়ের কথা এই যে, বাকশাল-ব্যবস্থাকে ‘একদলীয় শাসন প্রবর্তন’ ‘গণতন্ত্র হত্যা’ ইত্যাদি বলে যখন অনবরত প্রচারণা চালানো হয়েছে, তখন আওয়ামী লীগের সামনের কাতারের নেতারা এবং আওয়ামী ঘরানার বলে পরিচিত অধিকাংশ বুদ্ধিজীবী, লেখক, সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুর এই আদর্শকে ডিফেন্ড করা বা অপপ্রচারের জবাব দেয়ার জন্য এগিয়ে আসেননি। বরং বাকশাল প্রসঙ্গ উঠলেও লজ্জাবতী লতার মতো গুটিয়ে গেছেন। যেন প্রসঙ্গটি এড়াতে পারলেই তাঁরা বাঁচেন। আদর্শের দ্বন্দ্বে আওয়ামী লীগ এখানে শত্রুপক্ষের কাছে হেরে গেছে।
আমার কাছে বিস্ময়কর, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কেবল শত্রুপক্ষই তাঁর নামনিশানা মুছে ফেলার জন্য তৎপর হয়েছিল তা নয়, আওয়ামী লীগরাও যারা ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক’ বলে এখনও বুক চাপড়ান, তাঁরা সর্বাগ্রে বঙ্গবন্ধুর শেষ জীবনের আদর্শ ও লক্ষ্য বাকশাল দর্শন ত্যাগ করেন, বাকশাল ভেঙ্গে দিয়ে আওয়ামী লীগ নামটিকে তার পাতি বুর্জোয়া চরিত্রসহ পুনরুজ্জীবিত করে তাতে আশ্রয় গ্রহণ করেন।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সাম্প্রদায়িক দল থেকে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দলে এবং গণতান্ত্রিক দল থেকে বাকশাল নামে সমাজবাদী দলে উত্তরণের যে ধারা অব্যাহত ছিল তা রুদ্ধ হয়ে যায়। শুরু হয় শুধু আওয়ামী লীগের নয়, বাংলাদেশের গোটা ডান ও বাম রাজনীতির দ্রুত পশ্চাৎপসরণ। বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে আবার শ্রেণী বিভক্ত সমাজব্যবস্থা এবং তাতে নবউত্থিত লুটেরা শ্রেণীর একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা হয়।
বর্তমানে আমার বাম বন্ধুরা যাদের ‘লুটেরা শাসন শ্রেণী’ বলে নিত্যগালি দেন, তাঁরা নিজেদের অজান্তেই নিজেরাও সেই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের বর্তমান ডান, বাম, মধ্যবাম, মধ্যডান সব রাজনীতির এবং রাজনীতিকদের উৎস একই সুবিধাবাদী ও লুটেরা নব্য মধ্যবিত্ত শ্রেণী। তাঁদের কথাবার্তা, রাজনীতির খোলসে লাল, সবুজ, হলুদ, বাদামি নানা রঙ থাকতে পারে কারও লাঙ্গল, কারও চাঁদতারা প্রতীক থাকতে পারে, কিন্তু ভেতরে তাঁদের একই রঙ, একই শ্রেণীস্বার্থে তাঁরা বাঁধা। এ জন্যই আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাসদ, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি প্রভৃতি এখন বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক আদর্শের দল বলে পরিচিত। কিন্তু বাংলাদেশে এদের সকলের রাজনীতির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা কেউ কৃষক শ্রমিক বা গরিব মানুষের প্রতিনিধি নন। তারা সকলেই নব্য মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত এবং তাদের শ্রেণীর স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করেন। এরা মুখে বা সজ্ঞানে সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মতন্ত্রের কথা বলেন, কিন্তু অবচেতনভাবে সামন্ত যুগীয় মনোভাব, পরিবারতন্ত্র এবং একই শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা করে চলেন। এ জন্যই বাংলাদেশের রাজনীতিতে এত বিপুলসংখ্যক ফ্রন্ট থাকা সত্ত্বেও তা এতটা বিভক্ত এবং পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতার নামেও এরা ওই সাম্রাজ্যবাদেরই রক্ষিতার দায়িত্ব পালন করেন। আমাদের তথাকথিত সুশীল সমাজের বর্তমান ভূমিকা থেকে এই কথার সত্যতার আরও বেশি প্রমাণ মেলে।
বঙ্গবন্ধুর বাকশাল-দর্শন নিয়ে মুক্ত মনে কোন গবেষণা হলে দেখা যেত, তিনি মার্কসবাদী না হয়েও মার্কসের শ্রেণীদ্বন্দ্বে হয়ত বিশ্বাসী ছিলেন। আজকাল দেশ-বিদেশের অনেক নব্যপ-িত শ্রেণীসংগ্রামের তত্ত্বে বিশ্বাসী নন। তাঁরা বলেন, শ্রেণীসংগ্রামের যুগ শেষ হয়ে গেছে। কারণ, সমাজে শোষক ও শোষিত শ্রেণীর চরিত্র পাল্টে গেছে। কিন্তু একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, উন্নত ইউরোপেও শ্রেণীসংগ্রামের চেহারা পাল্টালেও মূল সংগ্রামটা শেষ হয়নি। ব্রিটেনে মার্গারেট থ্যাচারের সরকারের আমলে কয়েক বছরব্যাপী খনি শ্রমিকদের ধর্মঘট এবং তা ভাঙ্গার জন্য গোটাব্রিটিশ এসটাবলিশমেন্ট, সেনা-পুলিশ বাহিনী, বিচার বিভাগ, শিল্পপতি, বড় ব্যবসায়ী এবং মিগমিডিয়ার সম্মিলিত চেষ্টার মধ্যে শ্রেণীসংগ্রামের ছবিটি বড় বেশি প্রকাশ্য হয়ে উঠেছিল। রূপটি মারডোকের টাইমস পত্রিকার প্রিন্টিং ওয়ার্কার্সদের দীর্ঘ ধর্মঘটের মধ্যে শ্রেণীসংগ্রামের রূপটি আদৌ ঢাকা ছিল না। শ্রেণীসংগ্রাম এখনও শেষ হয়নি। আধুনিক প্রযুক্তির আবিষ্কারের ফলে একটি হোয়াইট কলার ওয়ার্কার্স শ্রেণীর উদ্ভব হওয়ায় এই সংগ্রামের চেহারা পাল্টে গেছে এবং গ্লোবাল ক্যাপিটালিজম একটা সুবিধাজনক স্থানে আছে। যা হোক, এই তত্ত্ব নিয়ে আজ আলোচনা নয়।
বঙ্গবন্ধু হয়ত বাংলাদেশে শ্রেণীদ্বন্দ্ব ও শ্রেণীসংগ্রাম এড়িয়ে শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তিনি এও ভেবে থাকতে পারেন, তিনি যখন দেশ স্বাধীন করে নিজে ক্ষমতায় বসতে পেরেছেন, তখন শ্রেণীসংগ্রাম এড়িয়ে নিজের ক্যারিশমা ও নেতৃত্ব গুণের জোরে বাংলাদেশে উদীয়মান লুটেরা একটি শ্রেণীর মাথা তোলা বন্ধ করে এতকালের শোষিত শ্রেণীরগুলোর অধিকার ও স্বার্থরক্ষা করতে পারবেন এবং রাষ্ট্রক্ষমতাতেও তাঁদের প্রতিনিধিত্ব ও অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে পারবেন।
অনুরূপভাবে চিকিৎসকরা ছিলেন এমবিবিএস ও এলএমএফ এই প্রধান দুই ভাগে বিভক্ত। জার্নালিস্ট বা সাংবাদিক বলতে পত্রিকায় প্রুফ রিডারদের বোঝাতো না। তারা ছিল অন্ত্যজ শ্রেণী, সাংবাদিক ইউনিয়নে তাদের সদস্য হওয়ার অধিকার ছিল না। আরও অনেক পেশার ক্ষেত্রে সামন্তযুগীয় এই উঁচু-নিচুর অভিজাত ও অনভিজাত শ্রেণীভেদ আরবান নগর সমাজেও প্রাধান্য বিস্তার করে ছিল।
বঙ্গবন্ধুর বাকশাল-প্রথায় এই শ্রেণীভেদ ও বৈষম্য লুপ্ত করা হয়। আইনজীবীদের চারটি শ্রেণী ভেঙ্গে শুধু এ্যাডভোকেট শ্রেণীতে সকলের পরিচয় সীমাবদ্ধ করা হয়। ব্যারিস্টারদেরও এ্যাডভোকেট হিসেবে পরিচিত হওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। মোক্তারদের শর্ট কোর্সের শিক্ষার মাধ্যমে এ্যাডভোকেট হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়। মেডিক্যাল স্কুল থেকে যারা ডাক্তারী পাস করে এলএমএফ ডাক্তার নামে পরিচিত হতেন, তাঁদের এক বছরের শর্ট কোর্সে অধ্যয়ন দ্বারা এমবিবিএস হওয়ার অধিকার দেয়া হয়। এলএমএফ ডিগ্রী বাতিল করা হয়। সংবাদপত্রের প্রুফ বিডারদের সাংবাদিক হওয়ায় মর্যাদা দেয়া হয়। আরও অনেক পেশায় এই শ্রেণীভেদ ও বৈষম্য লুপ্ত করা হয়।
এটা ছিল আমাদের কায়েমী স্বার্থ ও অভিজাততন্ত্রভিত্তিক সমাজব্যবস্থায় প্রচ- আঘাত। এই আঘাতের বৈপ্লবিক গুরুত্ব তখন আমরা অনেকেও অনুধাবন করতে পারিনি। আমার মনে আছে, একদিন প্রখ্যাত আইনজীবী মির্জা গোলাম হাফিজের বাসায় গেছি। দেখি, তিনি রাগে অন্ধ হয়ে বন্ধুবান্ধবের সামনে চিৎকার করছেন। বলছেন, শেখ সাহেব ভেবেছেন কি আমার মতো এক এ্যাডভোকেটকে তিনি একজন মোক্তারের সঙ্গে এক ঘাটে পানি খাওয়াবেন? এটা আমরা হতে দেব না।
তখনকার সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দল গিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে। তাদের দাবি ছিল সংবাদপত্রের প্রুফ রিডারদের সাংবাদিক হিসেবে গণ্য করা যাবে না। এই প্রতিনিধি দলে কতিপয় বামপন্থী সাংবাদিকও দেখেছি। তারা প্রুফ রিডারদের সাংবাদিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় সরকারের আইনের ঘোরবিরোধী। আগেই বলেছি, আমাদের ডান বাম সব রাজনীতির উৎস একই সুবিধাবাদী নব্য মধ্যবিত্ত শ্রেণী। তাদের শ্রেণীস্বার্থে আঘাত পড়লে ডান বাম নির্বিশেষে সকলেই যে একই সুরে কথা বলতে পারেন, তার প্রমাণ তখন দেখেছি।
বঙ্গবন্ধু বাকশাল পদ্ধতি প্রবর্তন করতে গিয়ে ভীমরুলের চাকে খোঁচা দিয়েছিলেন। তাঁর পদ্ধতির বিরুদ্ধে শুধু সেনাতন্ত্র, আমলাতন্ত্র নয়, শ্রেণী বিভক্ত সমাজের সকল স্তরের শিরোমণিরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন বাকশাল প্রথা ও তাঁর প্রবর্তককে অবিলম্বে উৎখাতের জন্য। বাকশাল পদ্ধতি প্রবর্তন সফল হলে বাংলাদেশে একটি নীরব বিপ্লব ঘটে যেত। আজকের দুর্নীতি, সন্ত্রাস, শোষণ ও লুণ্ঠনে জীর্ণ দেশটির চেহারা অন্য রকম হতো।
বাকশাল পদ্ধতিটি দেশে চালু হতে পারেনি। মাত্র আট মাস পদ্ধতিটি নিয়ে বঙ্গবন্ধু পরীক্ষা চালাবার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু এই আট মাসের (জানুয়ারি-আগস্ট, ৭৫) পরীক্ষা নিয়ে আটত্রিশ বছর যাবত প্রচারণা চালানো হচ্ছে, বাকশাল ছিল একদলীয় স্বৈরাচারী শাসন, গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ ও ডিক্টেটরশিপ প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা ইত্যাদি ইত্যাদি। যাঁরা বুদ্ধিজীবী সেজে, সাংবাদিক ও কলামিস্ট সেজে এখনও এসব কথা প্রচার করেন, তাঁদের অধিকাংশই পরবর্তীকালে সামরিক শাসন থেকে শুরু করে গণবিরোধী সকল শাসনের গুণগান করেছেন। সেই শাসনের অনুগ্রহভোগী হয়েছেন।
তিন দশকেরও বেশি সময়ের কুৎসা, নিন্দা, চরিত্র হননের একটানা অভিযান ব্যর্থ করে বঙ্গবন্ধু আবার তাঁর উজ্জ্বল নন্দিত রূপটি নিয়ে জাতীয় মানসে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। তিনি এখন নন্দিত। কিন্তু তাঁর বাকশাল-পদ্ধতিটি এখনও একশ্রেণীর মানুষের কাছে নিন্দিত। এক্ষেত্রে কুৎসা ও মিথ্যাচার সত্যকে ঢেকে রেখেছে। এই মিথ্যাকে পরাজিত করে সত্যের উদ্ঘাটন প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম নিয়ে এখন বহু বই পুস্তক বেরুচ্ছে, একই সঙ্গে দরকার বাকশাল পদ্ধতি নিয়ে সুষ্ঠু আলোচনা ও গবেষণা। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশের স্বার্থেই বাংলাদেশের মুক্ত মনের গবেষক ও ইতিহাসবিদরা একদিন বাকশালের আসল চরিত্র ও লক্ষ্য খুঁজে বের করবেন এবং বঙ্গবন্ধুর নামের সঙ্গে এই বাকশালও একদিন নন্দিত হবে বিকৃতিমুক্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে।




Wednesday, June 7, 2017

উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সরকারের তিন বছর




গনতন্ত্র ও উন্নয়ন একে অপরের পরিপূরক। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনটি এ দেশের সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ও গনতন্ত্রের যাত্রাকে অব্যাহত রাখতে একটি গুরত্বপূর্ণ এবং অন্যান্য মাইলফলক।

বাংলাদেশের জনগন দেশের স্বার্থে সবসময়ই অত্যন্ত সক্রিয়।চলমান উন্নয়ন পক্রিয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষায় প্রয়োজন জনগনের সক্রিয় অংশগ্রহন,সহযোগিতা এবং যথাযথ সমন্বিত উদ্যেগ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকারের কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যেগের কারনে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশ মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলসমূহ অর্জনে সাফল্য দেখিয়েছে এবং জাতীয় আয় ও বাজেটে বরাদ্দ উল্লেখ্যযোগ্য হারে বৃদ্ধি করতে সমর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের উত্তরন ঘটেছে নিম্ন আয় থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে। এ ছাড়াও কৃষি,শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্নখাতে ব্যাপক উন্নতি অর্জিত হয়েছে। অয়ান্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ স্বীকৃতি অর্জন করায় সারা বিশ্বের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সাফল্য আজ প্রমানিত। এই সাফল্য ও স্বীকৃতির সমন্বয়ে বর্তমান সরকার রুপকল্প (ভিশন) ২০২১ অর্জনে বদ্ধপরিকর।

গত তিন বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডে ও অগ্রগতির একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে দেয়া হলঃ

অর্থ, বানিজ্য ও পরিকল্পনাঃ

গত তিন বছরে গড় প্রবৃদ্ধির হারছিল ৬.৫ শতাংশ। এছাড়া মাথাপিছু আয় বেড়ে ১৪৬৬ মার্কিন ডলার, রিজার্ভ প্রায় ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং রেমিট্যান্স ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০১৫ সালে জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ বাস্তবায়ন করা এবং Financial Reporting Act অনুমোদনের পর ২০১৬ সালে ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রনয়ন করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এটি একটি সাহসী ও দুরদর্শী পরিকল্পনা। 

২০১৫-১৬ অর্থবছরের তুলনায় বাজেটের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৪৯ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসুচির ব্যয় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৩৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়নে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রপ্তানি খাতে আয় হয়েছে ১৬৭৯.৮১ কোটি মার্কিন ডলার। যা গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ের রপ্তানি আয়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি। পুরো ২০১৬ সালে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৪.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বিশ্ব ব্যাঙ্ক এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যবসায় প্রতিযোগিতামুলক দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পুর্ব এশিয়ার দেশগুলোর রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে ‘পাওয়ার হাউজ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে।

শিক্ষাঃ

দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে উপবৃত্তি ও বেতন মওকুফ সহায়তা হিসেবে ৪৯ লক্ষ ২৩ হাজার ৪৮৫ শিক্ষার্থীকে ৮৮০.২৭ কোটি টাকা বিতরন করা হয়। জাতিসংঘের বেধে দেয়া সময়সীমার তিন বছর আগেই ২০১২ সালে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাগত সমতা অর্জন করে। এটি সম্ভব হয়েছে মহাজোট সরকারের কঠোর পরিশ্রম ও আন্তরিকতার ফলে। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনের অংশ হিসেবে ১০০টি উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৩.১১ শতাংশ শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। ঢাকায় একটি অটিস্টিক একাডেমী স্থাপনের জন্য পৃথকভাবে দুটি হোস্টেল নির্মান করা হবে যেখানে প্রতিটিতে ১০০ জন অটিস্টিক শিশুর আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। অটিজম বিষয়ক বাংলাদেশের জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারপার্সন্ম সায়মা ওয়াজেদ এর আন্তরিক ও কঠোর পরিশ্রমে দেশের ওটিস্টিক ছেলে-মেয়েদের কল্যানে কার্যক্রম এগিয়ে চলছে।

২০১৪ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নীট ভর্তির হার ৯৭.৩০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ঝরে পড়ার হার হ্রাস পেয়ে ২০.০৯ শতাংশে দাড়িয়েছে। ২০১৬ শিক্ষাবর্ষে ৪ কোটি ২৬ লাখ ৫৩ হাজার ৯২৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৫টি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মাঠ পর্যায়ের দপ্তরসমূহে ইন্টারনেট সংযোগসহ ৫৫টি পিটিআইতে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। ৫ হাজার ৪৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া,ইন্টারনেট মডেম ও সাউন্ড সিস্টেম সরবারহ করা হয়েছে। আইসিটি ডিভিশনের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি জেলা সদরে একটি করে মোট ৬৫টি ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাবসহ সারা দেশের দুই হাজার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’ স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশনঃ

বিভিন্ন সূচকে স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রতিফলিত হচ্ছে। মানুষের গড় আয়ু ৭১.৮ বছরে উন্নীত হয়েছে। শিশু মৃত্যুর হার কমে প্রতি হাজারে ২৯ জনে দাড়িয়েছে। মাতৃমৃত্যু হারও কমে প্রতি লক্ষে ১৭০ জনে নেমে এসেছে। ৬৪টি জেলা হাসপাতাল ও ৪২১টি উপজেলা হাসপাতাল থেকে মোবাইল ফোনে ১৬২৬৩ নম্বরে ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

২০১৬ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মা ও নবজাতকের ধনুষ্টংকার উচ্ছেদে সাফল্যের জন্য বাংলাদেশকে পুরস্কার দিয়েছে। একই বছরে একসঙ্গে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার সিনিয়র স্টাফ নার্স। একসঙ্গে কোনো একটি বিভাগ থেকে এত নিয়োগ দেশে এটাই প্রথম। শুধু বাংলাদেশ নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এই রেকর্ড নেই।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রস্তাবিত অটিজম ও স্নায়ু বিকাশজনিত প্রস্তাবনা পাস হয়েছে।

আগে ৮৫টি দেশে ওষুধ রফতানি হতো। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ ১২৫টি দেশে ওষুধ রফতানি হচ্ছে। ওষুধ বিদেশে রফতানি হওয়ার কারণে ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ আরো জরুরি হয়ে পড়েছে। আর তাই চলতি বছর জাতীয় ওষুধ নীতি ২০১৬-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

দেশের কয়েকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৈকালিক চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এ ব্যবস্থায় অর্ধ লক্ষাধিক রোগী বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেছে। ক্রমান্বয়ে দেশের প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই সুবিধা চালু হবে।

কৃষি, খাদ্য ও শিল্পঃ

২০১৫-১৬ সালে খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছে ৩৯১.০৫ লক্ষ মেট্রিক টন।উৎপাদনের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রায় ৯০০০ কোটি টাকা ভর্তুকির প্রস্তাব করা হয়েছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের লক্ষ্যে ২৪৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ‘খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৩ সালে জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ৩০ শতাংশ ভর্তূকিতে যন্ত্রাংশ সরবারহের জন্য ১৭২.১৯ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নসহ হাওড় অঞ্চলে কৃষিযন্ত্র সরবারহের জন্য ১০.৬০ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। গত তিন বছরে খরা,বন্যা, লবনাক্ততা সহনশীলসহ রোগ প্রতিরোধক্ষম এবং উচ্চ ফলনশীল ৭০টি জাত অবমুক্ত করা হয়েছে। কৃষকদের জৈবসার ও প্রাকৃতিক বালাইনাশক ব্যবহারে উৎসাহিত করার ফলে নিরাপদ ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে।

২০১৬ সালে দানাশস্যের উৎপাদন ৩৫.৬৮ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য মজুদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে অভ্যন্তরীন উৎস হতে ১২ লক্ষ টন চাল এবং ২ লক্ষ ৪ হাজার মেট্রিক টন গম সংগ্রহ করা হয়েছে। ২০১৫ সালে মোট খাদ্যশস্য মজুদ ছিল ১৫ লক্ষ ৪৬ হাজার ৯৩৯ মেট্রিক টন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান মহাজোট সরকারের সময়ই শ্রীলংকায় ২৫ হাজার মেট্রিক টন চাল রপ্তানি হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ এই প্রথম অন্য দেশে চাল রপ্তানি করেছে। সরকারি খাদ্য বিতরন কর্মসুচির আওতায় ১১ লক্ষ ২৭ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং ৪ লক্ষ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন গম বিতরন করা হয়েছে। সরকারি খাদ্য গুদামের ধারনক্ষমতা ২০ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। এছাড়াও পারিবারিক পর্যায়ে দুর্যোগপ্রবণ ও উপকূলীয় অঞ্চলে ৫ লাখ পারিবারিক সাইলো বিতরণ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

বর্তমানে মৎস্য উৎপাদনে গড় প্রবৃদ্ধির হার ৬.২৩ শতাংশ। প্রায় ১ কোটি ৮০ লক্ষ লোক মৎস্য খাত থেকে জীবিকা নির্বাহ করে।রুপকল্প ২০২১ অর্জনে লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩৫.৪৮ লক্ষ মেট্রিক টন মৎস্য ও চিংড়ি উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। দুই বছরে প্রায় ১৬৫ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত মাছ উৎপাদিত হয়েছে এবং ১.৬১ লক্ষ মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্য জাত পণ্য রপ্তানি করে ৯.৫ হাজার কোটি টাকার বৈদশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। মিঠা পানির মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ blue growth economy তে বাংলাদেশকে pilot country হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দুধের উৎপাদন ৬৯.৭০ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। একই সময়ে মাংস ও ডিমের উৎপাদন যথাক্রমে ৫৮.৬ লক্ষ মেট্রিক টন ১ হাজার ৯৯ কোটি ৫২ লক্ষে উন্নীত হয়েছে।

ইউরিয়া সারের চাহিদা পূরনকল্পে বার্ষিক ৫ লক্ষ ৮০ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন শাহজালাল সার কারখানা নির্মান প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। বিসিক ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে দেশ ব্যাপী ক্ষুদ্রশিল্পে ৩৮৯০ ও কুটিরশিল্প খাতে ৮৯৩৪ জন সম্ভাবনাময় শিল্পোদ্যোক্তা চিহ্নিত করে তাদেরকে শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার পরামর্শ–সেবা- সহায়তা প্রদান করে আসছে । বিএসটিআই এর ফুড, মাইক্রোবায়োলজি, সিমেন্ট ও টেক্সটাইল ল্যাবরেটরি ভারতের National Accreditiation Board for Testing Laboratories (NABL) থেকে এক্রিডিটেশন লাভ করেছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানীঃ

বিদ্যুৎখাতে বর্তমান মহাজোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঈর্ষনীয় সাফল্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। গত তিন বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা (গ্রীডকানেকটেড) ১০২৮৯ মেগাওয়াট থেকে ১৫৩৫১ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। ২০১৩ সালে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৬৬৭৫ মেগাওয়াট। ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন দাঁড়ায় ৯০৩৬ মেগাওয়াট। ২০১৩ সালের মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩২১ কিলোওয়াট/আওয়ার হতে বর্তমানে ৪০৭ কিলোওয়াট/আওয়ারে উন্নীত হয়েছে। দৈনিক গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ২৭০০+ মিলিয়ন ঘনফুট হয়েছে এবং সাথে সাথে বিকল্প উৎস হিসেবে আমদানিকৃত তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) চিহ্নিত করা হয়েছে। Floating Storage Re-gasification Unit (FSRU) স্থাপনের জন্য Excelerate Energy (EE) Singapore এর কারিগরি সহায়তায় দৈনিক ৫০০ এমেমসিএফডি (MMCFD) ক্ষমতাসম্পন্ন LNG TERMINAL স্থাপনের কাজ শেষ হলে ২০১৭ এ জাতীয় গ্রিডে অতিরিক্ত বিদ্যুৎযুক্তকরাসম্ভবহবে।

সড়ক-সেতু, রেল, নৌ ও স্থানীয় যোগাযোগ অবকাঠামোঃ

পদ্মা সেতুর মূল সেতু এখন প্রায় দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে দুটি সার্ভিস এরিয়া, কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড নির্মান সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের কাজ প্রায় ৪০ ভাগ শেষ হয়েছে। মোট ৪১ টি স্পানের মধ্যে তিনটি ইতোমধ্যে প্রকল্প অঞ্চলে এসে পৌঁছেছে। মাওয়া পয়েন্টের সংযোগ সড়কের কাজ শেষ, আর জাজিরা পয়েন্টের কাজ প্রায় ৬০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।

ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে উত্তরা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মানের প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চট্রগ্রামের কর্নফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল নির্মানে চীন সরকারের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ঢাকা- চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ক উদ্বোধন হয়েছে গত জুলাই মাসে। একই সাথে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন মহাসড়কও সাধারনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। পার্বত্য চট্রগ্রামে ২২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৬টি মহাসড়ক উন্নয়ন করা হয়েছে। ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ থানচি- আলিকদম মহাসড়কটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। সিলেটে সুরমা নদীর উপর কাজীর বাজার সেতু, মাদারীপুরে সপ্তমবাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু, শেখ রাসেল সেতু, সুনামগঞ্জে সুরমা সেতু, বিরুলিয়া ও আশুলিয়া সড়কে বিরুলিয়া সেতু, আড়িয়াল খা সেতু, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র সেতু,কলাতলী সেতুসহ বেশকিছু সেতুর নির্মান কাজ শেষ হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর যানযট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সূদরপ্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয় ও বিভাগ। এই ধারাবাহিকতায় প্রায় ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হয়েছে। শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত বাস র্যা পিড ট্রানজিট (BRT) নির্মানের প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যে ২ লক্ষ ২১ হাজার ২৩৮ সেট ডিজিটাল নম্বরপ্লেট বিভিন্ন গাড়িতে সংযোজন করা হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২ লাখ ৪২৫টি ডিজিটাল স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স বিতরন করা হয়েছে। সড়ক। সেতু মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষন ২০১৪-১৫ অর্থবছরে অনুন্নয়ন খাতের আওতায় সার্ফেসিং ব্যতীত ১২৫ কিলোমিটার সড়ক পুনর্বাসন,২৭১ কিলোমিটার কার্পেটিংসহ সীলকোট, ১ হাজার ৪৭৪ কিলোমিটার ওভারলে, ২৫৩ কিলোমিটার ডিবিএসটি,২১টি সেতু নির্মান/পুনঃনির্মান,১০৭টি কালভার্ট নির্মান/পুনঃনির্মান কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৫ সালে কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা এবং ঢাকা-সিলেট-শিলং-গৌহাটি-ঢাকা রুটে বাস সার্ভিস চালু হয়। মতিঝিল-আব্দুল্লাহপুর রুটে এসি বাসে ই-টিকেটিং সিস্টেম চালু হয়েছে। বিআরটিসির আওতায় ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে গাবতলী ও মোহাম্মদপুরে ০২টি নতুন বাস ডিপো চালু হয়েছে।

২০১৬ সালে ইন্দোনেশিয়া থেকে সংগ্রহ করা কোচ দিয়ে একতা, দ্রুতযান ও সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করা হয়েছে। এ তিনটি ঢাকা-সিরাজগঞ্জ-ঢাকা, ঢাকা-দিনাজপুর-ঢাকা রুটে চলাচল করছে। এ ছাড়া লাল সবুজ রঙ্গের কোচ দিয়ে ৫টি ট্রেন চালু করা হয়েছে। এ নিয়ে নতুন ট্রেনের সংখ্যায় দাঁড়ালো সাতে।

দক্ষিনাঞ্চলের উন্নয়নে রেল যোগাযোগের বড় প্রকল্প পায়রা রেল লাইন হাতে নেওয়া হয়েছে। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। রেলপথের উন্নয়নে ১১টি স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থা আধুনিকায়নসহ লাকসাম-চিনকি আস্তানা ৬১ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মান প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। সিগন্যালিংসহ টঙ্গী-ভৈরববাজার পর্যন্ত ৬৪ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মান প্রকল্পের ভৌত কাজ ইতিমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে। এছাড়া ১০০টি মিটার গেজ ও ১৭০টি ব্রড গেজ যাত্রীবাহী গাড়ী সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে।

বাংলাদেশের তৃতীয় বাণিজ্যিক সমুদ্র বন্দর হিসেবে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে পায়রা বন্দর, এক হাজার ১২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের মধ্যে এই সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে জাহাজ ভেড়ার অবকাঠামো নির্মিত হয়ে যাওয়ায় আগেই ভিড়তে শুরু করেছে জাহাজ।

চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫০ মিটার পর্যন্ত ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারছে। এই সক্ষমতা বাড়াতে ‘বে-টার্মিনাল’ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বে-টার্মিনাল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সমুদ্র বন্দরের মতো বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে পারদর্শী ও অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান জার্মানির হামবুর্গ পোর্ট কনসালটিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ ও শরীয়তপুরের মধ্যে এবং চাঁদপুরের মতলব ও নারায়নগঞ্জের মধ্যে দুটি নতুন রুটে ফেরি চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশলঅধিদপ্তরের (LGED)বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ৯ হাজার ১৩৫ কিলোমিটার ( উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম) সড়ক, ৪৩ হাজার ২৫০ মিটার ব্রীজ/কালভার্ট নির্মান করা হয়েছে। রাজধানীর যানজট সমস্যা নিরসনে LGED বর্তমানে ৭৭৩ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে মগবাজার-মৌচাক সমন্বিত ফ্লাইওভার প্রকল্পের অধীন ৮.২৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চারলেন বিশিষ্ট একটি ফ্লাইওভার নির্মানের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে।

বিজ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগঃ

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে গত দু বছরে ৬৬৮.১১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ কর্মসূচির আওতায় ২৪৩৯ জন ছাত্রছাত্রী/গবেষককে অর্থসহায়তা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপে ২৪০০ মেগাওয়াটবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন লক্ষ্যে রাশিয়ান ফেডারেশন নির্ধারিত ঠিকাদারের সাথে ৩টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ জেলা/উপজেলা পর্যায়ে ১৮,১৩০ টি সরকারি অফিসে কানেক্টিভিটি স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ,ভারত,নেপাল ও ভূটান আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক স্থাপনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে এবং বাংলাবান্ধা পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করা হয়েছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির লক্ষণীয় প্রয়োগের মাধ্যমে সরকারি সেবা প্রাপ্তিতে আমূল পরিবর্তন আনার কাজে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতার স্বীকৃতি হিসেবে এশিয়ান-ওশেনিয়ান কম্পিউটিং ইন্ডাস্ট্রি অরগনাইজেশন প্রবর্তিত ‘এসোসিও ডিজিটাল গভর্নমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ২০১৬’ পেয়েছে বাংলাদেশ। আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ২০১৬ পুরস্কারে ভুষিত হন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা অক্টোবর ২০১৬ পর্যন্ত প্রায় ১২.০৭ কোটি এবং ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৬.৬৯ কোটিতে পৌছেছে। টেলিডেনসিটি প্রায় ৮৩.০৯ শতাংশ এবং ইন্টারনেট ডেনসিটি প্রায় ৩৪.৪০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। টেলিডেনসিটি ও ইন্টারনেট ডেনসিটি যথাক্রমে ১০০ শতাংশ ও ৬৫ শতাংশে উন্নীত করতে জুলাই ২০১৬তে নীতিমালা গ্রহণ করেছে। ডিসেম্বর ২০১৫ থেকে সারাদেশে বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতিতে জাতীয় পরিচয়পত্র ভেরিফিকেশনসহ সিম/রিম রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। সরকারের অন্যতম বৃহৎ রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলেটরি কমিশন ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪২০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। ডাক অধিদপ্তর মোবাইল মানি অর্ডার সার্ভিস ও ক্যাশকার্ড চালু করেছে। এ পর্যন্ত ৩৫০০ ডাকঘরে পোস্ট ই-সেন্টার চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড ঢাকা শহরের ১ লক্ষ পুরাতন ডিজিটাল টেলিফোন সিস্টেম প্রতিস্থাপনসহ ১ লক্ষ ৩৯ হাজার নতুন টেলিফোন সংযোগ নতুন টেলিফোন প্রদান করেছে। ৯৫০টি ইউনিয়নে ইতোমধ্যে প্রায় ৭,১৫৪ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করা হয়েছে এবং ৩০০টি ইউনিয়নকে অপটিক্যাল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে।

২০১৭ সালের মধ্যেই দেশে ৪-জি প্রযুক্তি চালু করা হবে। এর পাশাপাশি ভয়েসমেইল সেবাও চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

সমাজকল্যান ও সামাজিক নিরাপত্তা, ভূমিহীনে ভূমিদান এবং মহিলা ও শিশু উন্নয়নঃ

দেশ থেকে দারিদ্র্য নির্মূল করতে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় ৫১ লাখ ২০ হাজার প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, বিধবা ও শারিরীকভাবে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর মাঝে সরকার বিভিন্ন ধরনের ভাতা প্রদান করছে। পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রমের আওতায় সুফলভোগীর সংখ্যা ২৪,১৫,০০০ জন। দরিদ্র নারীদের ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য পল্লীমাতৃকেন্দ্র কার্যক্রমের আওতায় বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলায় ৩১৮টি কর্মসূচির আওতায় সুফলভোগীর সংখ্যা ৮৩৪৯৬০। ২০১৬ সালে বয়স্ক ভাতার হার ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। উপকার ভোগীর সংখ্যা এখন ৩১.৫ লক্ষ। বিধবা ভাতার হারও ৫০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে, উপকার পাচ্ছেন ১১.৫ লক্ষ দুস্থ ও বিধবা নারী। ৭০ হাজার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তির ২০১৬-১৭ সালের বাজেট নির্ধারিত হয়েছে ৪৭.৮৮ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১০৫ জন শারীরিক প্রতিবন্ধীকে শনাক্ত করা হয়েছে।

একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের অধীনে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ১০০টি শাখা উদ্বোধন করা হয়েছে।

অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় সুফলভোগীর সংখ্যা বর্তমানে ৭.৫০ লক্ষ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তাদের জন্য ভাতা বরাদ্দ হয়েছে ৬০০ টাকা হারে ৫৪০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আটটি উদ্যেগের একটি হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্প। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২য় পর্যায়ে ২৩৮টি প্রকল্পের অধীনে সুফলভোগীর সংখ্যা ২২,০৪০টি পরিবার। এই প্রকল্পের অধীনে ১ লক্ষ ২২ হাজার পরিবারের মধ্যে ৯৭ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছে।

পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়ঃ

দেশের জনগনকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আটটি উদ্ভাবনী উদ্যোগের অন্যতম ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প’। এছাড়া দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লি উন্নয়নের অংশ হিসেবে ‘চরজীবিকায়ন কর্মসূচি-২’ ‘সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি’, ‘পল্লি জনপদ (উন্নত আবাসন) সৃজন’, ‘ইকোনমিক এমপাওয়ারমেন্ট অফ দি পুওরেস্ট (EEP)’, ‘মিল্কভিটার কার্যক্রম সম্প্রসারন’, বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্যবিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমী’ প্রতিষ্ঠাকরন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে দেশব্যাপী গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কৃষিভিত্তিক খামারের সংখ্যা ১৮.৭২ লক্ষ। ডিজিটাল বাংলাদেশের অবদানে সুবিধাভোগীরা অনলাইনের মাধ্যমে ২৫৭৩ কোটি টাকা লেনদেন করেছে। ইতোমধ্যে ৬৪ জেলার ৪৮৫টি উপজেলায় এ অনলাইন কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে বিআরডিবির আওতায় এ পর্যন্ত ১,৯৯,৬৮৮টি সমিতি ও দল গঠন করা হয়েছে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেচ কার্যক্রমের আওতায় সদস্যদের মাঝে ১৮,৪৬০টি গভীর নলকূপ, ৪৪,৫২৩টি অগভীর নলকূপ, ১৯,৪০৫টি শক্তিচালিত পাম্প এবং ২,৭৩,০০০টি হস্তচালিত পাম্প বিতরন করা হয়েছে। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (BARD) ৮৮টি প্রশিক্ষন, অবহিতকরন এবং কর্মশালা সংগঠনের মাধ্যমে ৩,৬৫১ জন অংশগ্রহনকারীকে প্রশিক্ষন প্রদান করেছে। চর জীবিকায়ন কর্মসূচির আওতায় কুড়িগ্রাম,জামালপুর, গাইবান্ধা,বগুড়া এবং সিরাজগঞ্জ জেলার ২৮টি উপজেলার ২.৫০লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ এবং প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ পরোক্ষভাবে উপকৃত হচ্ছে।

বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণঃ

২০১৬ সালে রেকর্ড ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকারের বলিষ্ঠ উদ্যোগে অবৈধ ও অনিয়মিত অভিবাসন রোধ করা সম্ভব হয়েছে। অবৈধ ও অনিয়মিত অভিবাসন রোধকল্পে বিদ্যমান টাস্কফোর্স কে আরও বেগবান করার ফলে বিগত বছরে প্রায় ২ হাজার বাংলাদেশির অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে।সিঙ্গাপুরের বিল্ডিং কনস্ট্রাকশানসেক্টরে নিরাপদ ও দক্ষ কর্মী প্রেরণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো Sending Organization হিসেবে ১৪টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।জাপানেTechnical Intern প্রেরণের বিষয়ে International Manpower Development Organization, Japan এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মধ্যে MoUস্বাক্ষরিত হয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সাথে এ সম্পর্কিত আর ৪টি টেকনিক্যাল এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়েছে।“বিভিন্ন জেলায় ৩০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন (২য় সংশোধিত)” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২৪টি জেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক দেশের ৬৪ জেলায় প্রায় ৯ হাজার ৫শ ১৩ জন বিদেশগামী কর্মীকে ‘অভিবাসন ঋণ’ প্রদান করেছে। তা ছাড়া বিদেশ ফেরত প্রায় ১৫০ জন কর্মীকে পুনর্বাসন ঋণ প্রদান করা হয়েছে।

আইনঃ

ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্পের আওতায় বিচার বিভাগকে ডিজিটাল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পে ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে দ্রুত ও স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা, বিচার ব্যবস্থার জন্য প্রশাসনিক ও বিচার সংক্রান্ত কার্যক্রম অটোমেশন, ই-কোর্ট রুম স্থাপন এবং বিচারক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আইসিটি সক্ষমতা উন্নয়নসহ বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন হবে।

এই প্রকল্পের কর্মপরিধিতে রয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ আর্কিটেকচারের আওতায় বিচার ব্যবস্থার জন্য এন্টারপ্রাইজ আর্কিটেকচার উন্নয়ন, বিচার ব্যবস্থার জন্য এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ইআরপি) সফটওয়্যারের উন্নয়ন, বিচার ব্যবস্থাধীন সব অফিস সংযুক্ত করে একটি ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) তৈরি, সুপ্রিম কোর্টে ডাটা-সেন্টার আপগ্রেডেশন, নেটওয়ার্ক অপারেশন সেন্টার স্থাপন, দেশের ৬৪ জেলার ১ হাজার ৪০০টি কোর্ট রুমকে ই-কোর্টরুমে রূপান্তর, নিরবচ্ছিন্ন বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাকা ছাড়া ৬৩ জেলায় ৬৩টি মাইক্রো ডাটা-সেন্টার স্থাপন এবং সুপ্রিম কোর্টের কেন্দ্রীয় ডাটা সেন্টারের সঙ্গে আন্তঃসংযোগ স্থাপন। এছাড়া বিচারকদের ২০০০ ট্যাব বা ল্যাপটপ প্রদান, সুপ্রিম কোর্টের রেকর্ডরুম অটোমেশন এবং পুরনো রেকর্ডগুলো ডিজিটাইজ করা (পাইলট আকারে), আগের বিভিন্ন মামলার রেকর্ড এবং এ সংক্রান্ত রায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা, ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেমের মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ এবং ডিজিটাল এভিডেন্স রেকর্ডিং ব্যবস্থা উন্নয়নও এই কর্মপরিধির মধ্যে রয়েছে।

পররাষ্ট্রঃ

২০১৬ সাল বৈদেশিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। এই বছর চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং বাংলাদেশ সফরে আসেন। এই সফরে দুই দেশের মধ্যে ২৬টি চুক্তি সম্পাদন হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও বাংলাদেশ সফরে আসেন এবং জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। পাশাপাশি এই অঞ্চলে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের সাথে কাজ করার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশ এ বছর গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (GFMD) এর নবম সম্মেলন আয়োজন করে। ১৩০ টি দেশের ৬০০ জন সরকারী কর্মকর্তা ও ৩০টি বেসরকারী সংস্থার ৬০ জন প্রতিনিধি এই সম্মেলনে অংশগ্রহন করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সম্মেলন, গ্লোবাল উইম্যান লিডারস ফোরাম, জি৭ আউটরিচ সম্মেলন, আসেম সম্মেলন, বুদাপেস্ট ওয়াটার সামিট, ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ সামিট, গ্লোবাল ফান্ড রিপ্লেনিশমেন্ট কনফারেন্স এ অংশগ্রহন করেন।

বিশ্বখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনে পরাক্রমশালী নারীদের তালিকায় ৩৬তম স্থান অধিকার করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফরচুন ম্যাগাজিনের ‘ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট লিডার’ এর তালিকায় ১০ম স্থান অধিকার করেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাময়িকী ফরেন পলিসি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ চিন্তাবিদদের একজন হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং জলাবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব মোকাবিলা ও বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে সক্রিয় ও দৃশ্যমান ভূমিকা রাখায় তাঁকে ‘ডিসিশানমেকার্স’ ক্যাটাগরিতে শীর্ষ ১৩ জন চিন্তাবিদদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রাজনীতিতে লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ মর্যাদাপূর্ণWomen in Parliament(WIP) Global Forum Award 2015 পুরষ্কারেভূষিত হয়। ২০১৪ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনেস্কোর ‘শান্তি বৃক্ষ’ (Tree of Peace)পুরস্কার লাভ করেন। জাতিসংঘেরMillennium Development Goals (MDGs) অর্জনে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। ২০১৪ সালে Commonwealth Parliamentary Association (CPA) এর নির্বাহী কমিটির চেয়ারপার্সন, Inter-Parliamentary Union (IPU) এর প্রেসিডেন্ট, Comittee on the Elimination of Discrimination Against Woman (CEDAW) এর সদস্য, International Mobile Satellite Organizatio(IMSO) এর মহাপরিচালক পদে বাংলাদেশের প্রার্থীরা নির্ভাবিত হন। একই বছর বাংলাদেশ জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল, UNICEF Executive Board, International Labour Organization (ILO) এর গভর্নিং বডি এবং ITU Council এর সদস্য নির্বাচিত হয়। ২০১৫ এ UNESCO বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটকে UNESCO Category II স্ট্যাতাস প্রদান করে এবং জাতিসংঘ সাধার পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে। ২০১৪ সালে ঢাকায় BIMSTEC এর স্থায়ী সচিবালয় স্থাপিত হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে দুদেশের মধ্যে ২২টি উল্লেখযোগ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

পরিবেশ ও বনঃ

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত কার্যক্রমের স্বীকৃতিস্বরুপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে জাতিসংঘ ঘোষিত Champions of The Earth পুরষ্কারে ভূষিত হন। সুন্দরবন এনভায়রনমেন্টাল এন্ড লাইভলিহুড সিকিউরিটি (SELS) প্রজেক্টের মাধ্যমে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর বিকল্প আয়বর্ধক কর্মসংস্থান সৃষ্টিকরার ফলে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ উপকৃত হয়েছে। পরিবেশ দূষণকারী ৪০২টি প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১৩৪ কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠা সহ দেশের উপকূলীয় জেলাসমূহে প্রায় ২ লক্ষ হেক্টর এলাকায় বনায়নের মাধ্যমে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। ৫ লক্ষ পরিবারকে সামাজিক বনায়নের আওতায় আনা হয়েছে। ৭২ শতাংশ শিল্প কারখানায় ইটিপি স্থাপন সহ ৮ হাজার বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন এবং ১৫ লক্ষ উন্নত চুলা বিতরণ করা হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ই প্রথম জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নিজস্ব অর্থায়নে একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে।

তথ্যঃ

অধিকতর সেবা এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে কার্যক্রম সম্পাদনের উদ্দেশ্য নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, গণযোগাযোগ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের জন্য ১৬ তলা বিশিষ্ট তথ্য ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমান জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সরকারী ভবনসমূহ নির্মাণ কার্যক্রম তরান্বিত হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য বিটিভি সদর দপ্তর ভবন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তথ্য কমিশন দুবছরে ৮৮৭৮ জন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহ সাংবাদিক, সাব এডিটর, সাব ইন্সপেক্টর ও শিক্ষককে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে এবং ৫৮৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫৫৭টি নিষ্পত্তি ক্রএছে। অবশিষ্ট ৩০টি অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য প্রক্রিয়াধীন্ন রয়েছে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্তঃ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (RAJUK) আবাসন সমস্যার সমাধানে উত্তরা আদর্শ আবাসিক শহর (৩য় পর্ব), পূর্বাচল নতুন শহর ও ঝিলমিল আবাসিক শহরে মধ্যবিত্তের জন্য প্রায় ৯০ হাজার এপার্টমেন্ট নির্মাণ করছে। এ ছাড়া জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ও গণপূর্ত অধিদপ্তর সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসন সমস্যার নিরসন এবং নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে বিক্রয়ের জন্য ৮৮৮১টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করছে। রাজধানীর কুড়াইল এলাকায় অংশীদারত্বের ভিত্তিতে প্রায় ৫০০০ ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জাতীয় উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে পূর্বাচলে দেশের সর্বোচ্চ ১৩০ তলা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রঃ

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থল সীমানা সংক্রান্ত Land Boundary Agreement 1974 (মুজিব ইন্দিরা চুক্তি) অনুসমর্থন দলিল বিনময়ের মাধ্যমে কার্যকর হয়েছে। ১ আগষ্ট ২০১৫ কে Appointed day হিসেবে নির্ধারণপূর্বক উভয় দেশের মধ্যে ভূমি বিনিময় সম্পন্ন হয়। ফলে অপদখলীয় ভূমিসহ বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডে অবস্থিত সকল ভারতীয় ছিটমহল বাংলাদেশের এবং ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত সকল বাংলাদেশী ছিটমহল ভারতের ভূখন্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও কঠোর পরিশ্রমে দীর্ঘদিনের সমস্যা নিরসন হয়। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর আধুনিকায়ন ও সীমান্তের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিদ্যমান ৫২৭টি বর্ডার অপারেশন পোষ্ট (বিওপি) এর অতিরিক্ত ৮০টি বিওপি নির্মাণ করা হয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিসহ প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ বাংলাদেশি নাগরিকদের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (MRP) এবং প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার মেশিন রিডেবল ভিসা (MRV) প্রদান করা হয়েছে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনঃ

১ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প এর প্রথম পর্যায়ের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। বর্তমান প্রকল্পের আওতায় রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট থেকে ৯ হাজার ফুটে উন্নীতকরণ, প্রস্থ ১৫০ থেকে ২০০ ফুটে উন্নীতকরণ, এয়ারফিল্ড লাইটিং সিস্টেম স্থাপন, ফায়ার ফাইটিং ভেহিকল ক্রয় এবং নাব্য যোগাযোগ যন্ত্রপাতি স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক বেশ কিছু কাজ চলছে।

৪ হাজার ৩শ ২ লক্ষ টাকা ব্যায়ে চট্টগ্রামস্থ চট্রগ্রাম মোটেল সৈকতের জমিতে নতুন পর্যটন মোটেল নির্মাণ এবং কক্সবাজারস্থ হোটেল শৈবালের সংস্কার সমাপ্ত হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের টার্মিনাল ১ ও ২, অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল, ভি ভি আইপি কমপ্লেক্স, কন্ট্রোল টাওয়ার ভবন ও পাওয়ার হাউজ ফায়ার ডিটেকশন ও এলার্ম সিস্টেম স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে বাংলাদেশ বিমান সর্বমোট ২৭৬ কোটি টাকা নীট মুনাফা অর্জন করেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মুনাফার পরিমান ছিল ২৩৩.০৬ কোটি টাকা।

বস্ত্র ও পাটঃ

বস্ত্র ও পাট খাতের বিদ্যমান সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে তা নিরসনের জন্য পাট আইন ২০১৫, বস্ত্রশিল্প প্রতিষ্ঠান আইন ২০১৫ ও বস্ত্রনীতি ২০১৫ প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরিবেশ বান্ধব পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন ২০১০ এর আওতায় ধান,চাল,গম,ভুট্টা, সার ও চিনি মোড়কীকরণে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূল্ক করা হয়েছে।

প্রতিরক্ষাঃ

২০১৬ সালে নৌ প্রতিরক্ষায় যুক্ত হয়েছে সাবমেরিন। বানৌজা ‘নবযাত্রা’ ও বানৌজা ‘জয়যাত্রা’ নামের দুটি সাবমেরিন চীনের কাছ থেকে ক্রয় করেছে সরকার। সমুদ্রসীমা টহল দিতে ২০১৬ সালে একটি ফ্রিগেট ও একটি করভেট কমিশনপ্রাপ্ত হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী চিন্তা চেতনায় বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিকে যুগোপযোগী ও আধুনিকায়নের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিএমএ বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ, ভাটিয়ারী, চট্টগ্রাম শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ত হয়েছে। বিমান বাহিনী্ ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণ শক্তিশালী ও গতিশীল করার লক্ষ্যে বিএএফএ বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ যশোর শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। Upgradation of Agro-Metrological Services শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে ৭টি কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার স্থাপন করা হয়েছে। Improvement of Digital Mapping, System of Survey of Bangladesh (Revised) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ঢাকা, রংপুর, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও মৌলভীবাজারে ৬টি Permanent GNSS/GPS Station, Digital Mapping Unit (DMU) স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া সমগ্র দেশের Aerial Photography সম্পন্নকরণ সহ আন্তর্জাতিক সীমান্ত উপকূল ও সুন্দরবন এলাকার জন্য Sattelite Image ক্রয় করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কঃ

আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নিয়েছে এক অনন্য উদ্যোগ। যুদ্ধাহত ও ভুমিহীন মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে নির্মান করা হয়েছে বীর নিবাস। ইতোমধ্যে সিলেটে ৬২টি বীর নিবাস হস্তান্তর করা হয়েছে। 

সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতা বর্তমানে ১০০০০ টাকা এবং ভাতাভোগীদের সংখ্যা ২ লক্ষে উন্নীত করা হয়েছে। জানুয়ারি ২০১৭ থেকে ৬৭৬ জন খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের মধ্যে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাকে মাসিক ৩০০০০ টাকা এবং বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মাসিক ১৫০০০ টাকা, বীর উত্তমদের জন্য ২৫০০০ টাকা, বীর বিক্রমদের জন্য ২০০০০ টাকা হারে সম্মানী ভাতা চালু করার প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণির যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারবর্গের মাসিক রাষ্ট্রীয় ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করে পঙ্গুত্বের হার অনুযায়ী মাসিক সর্বনিম্ন ১৮০০০ টাকা এবং মাসিক সর্বোচ্চ ৪৮০০০ টাকা হারে ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য নিয়মিত ভাতা প্রদান একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। 

ভূমিহীন ও অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ প্রকল্পটিতে ২৯৭১টি বাসস্থান নির্মাণের সংস্থান রাখা হয়েছে। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৪৩টি জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সকল উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে ৮১টি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৫৯টি স্মৃতিস্তভের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে।

ধর্মঃ

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় দুই বছরে ১,৫০০০০টি শিশুকে প্রাক প্রাথমিক ও নৈতিকতা শিক্ষা, ১০,২৯০০০ জন কিশোর কিশোরীকে সহজ কুরআন ও নৈতিকতা শিক্ষা এবং ৩৮,৪০০ জন নিরক্ষর বয়স্ক ব্যক্তিকে অক্ষরজ্ঞানদানসহ নৈতিকতা শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কার এবং দুঃস্থ পুনর্বাসনের লক্ষ্যে মোট ৪২,৯৮,৮৬০০০ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে হজ ব্যবস্থাপনা সিস্টেমে সকল হজযাত্রীর অনলাইন রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে। প্রত্যেক হজযাত্রীকে এসএমএস এর মাধ্যমে হজ পূর্ব ৬টি নোটিফিকেশন প্রেরণ এবং মোবাইলের TVR সিস্টেমের মাধ্যমে হজ বুলেটিন ও তথ্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

সংস্কৃতিঃ

জাতীয় জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ১৫ জন সুধীকে একুশে পদক ২০১৫ প্রদান করা হয়েছে। ২০১৪ এ বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে সংস্কৃতি বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক এবং ২০১৫ এ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১৫-১৭ মেয়াদে সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বেসরকারি পাঠাগার অনুদান খাতে ১ হাজার ২৫টি পাঠাগারে ২ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। এছাড়া চারুশিল্প, থিয়েটার ইত্যাদি খাত থেকে ৪ কোটি ৮৬ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা দেশের ১,১৭৪টি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে অনুদান প্রদান করা হয়।

পানি সম্পদঃ

গত ৩ বছরে ১৯২.৪২ কিলোমিটার নদী খনন/ড্রেজিং সমাপ্ত হয়েছে। এর মধ্যে ক্যাপিটাল (পাইলট) ড্রেজিং অফ রিভার সিস্টেম ইন বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায় যমুনা নদীতে ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় পরীক্ষামূলক ড্রেজিং সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রাপ্ত ড্রেজড ম্যাটেরিয়ালস দ্বারা সিরাজগঞ্জ শহর সংলগ্ন নদী তীরবর্তী অংশে চারটি ক্রসবার নির্মাণ করা হয়। এতে প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটার ভূমি স্থায়ীভাবে পুনরুদ্ধার করা হয়। উপকূলীয় এলাকায় নতুন জেগে উঠা চরে সমাপ্তকৃত চর ডেভেলপমেন্ট ও সেটেলমেন্ট প্রকল্পসমূহের আওতায় ১৭,৫৩৩ ভূমিহীন পরিবারকে ১৪,৭৯২ হেক্টর জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে।

যুব ও ক্রীড়াঃ

এইবছর বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রথমবারের মত বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়েকে পরাজিত করেছে। বাংলাদেশের মেয়েরা এএফসি অনুর্ধ্ব-১৪ ফুটবলে আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত নারী ফুটবল চাপিম্পয়নশীপ প্রতিযোগিতায় আমাদের মেয়েরা এই প্রথমবারের মত রানার্স-আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। জাতীয় নারী ক্রিকেট দল জায়গা করে নিয়েছে আগামী বছরের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটে।

আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা, দূরদর্শীতা ও রাষ্ট্রনায়কোচিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবার দ্বারপ্রান্তে। ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সরকারের ধারাবাহিক দুই মেয়াদে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। ২০২১ সালে মধ্য আয়ের দেশ হিসাবে বাংলাদেশ বিশ্বে পরিচিতি পাবে- এলক্ষ্যে মহাজোট সরকারের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের এ ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারলে বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে।



Monday, June 5, 2017

বিগত আট বছরে দেশ-বিদেশে প্রায় দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

বিগত আট বছরে দেশ-বিদেশে প্রায় দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। গতবছর রেকর্ড ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। ৫ কোটি মানুষ নিন্মবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে উন্নীত হয়েছে। ' - টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার পরিচালনার ৩ বছর পূর্তিতে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে দেশের অর্থনীতি এখন ঊর্ধ্বমুখী। দেশের শ্রম্বাজার বাজার দিনে দিনে প্রসারিত হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এবং বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদন বলছে, সামনের বছরগুলোতে এই বৃদ্ধির হার আরও আশাব্যঞ্জক হবে। বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে ভোগ্যপণ্য উৎপাদন, বিপণন প্রতিষ্ঠান, আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা-প্রশাসনিক খাতে, কৃষি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, পর্যটনশিল্প, আবাসন, স্বাস্থ্য ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে দক্ষ কর্মীর চাহিদা বেড়েছে। কাজের সুযোগ বেড়েছে টেলিযোগাযোগ খাত, পোশাকশিল্প, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানে। বাংলাদেশে আরেকটি বিকাশমান ক্ষেত্র হচ্ছে ওষুধশিল্প।
দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতে আওয়ামী লীগ সরকারের সামনে ছিল অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এখন এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প-২১ সামনে রেখে নানামুখী অর্থনৈতিক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নে বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়।

বাংলাদেশ সরকারের ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন পর্যালোচনা প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, ২০১০-১১ থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশের ভেতরে নতুন সাড়ে ৪৭ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। বিদায়ী বছরগুলোতে অর্থনীতির প্রধান সূচকে ইতিবাচক ধারা বজায় ছিল। বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ সফরে এসে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “ বাংলাদেশ তর তর করে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন সময় এসেছে উচ্চাভিলাষী হবার। আমি খুবই আশাবাদি। আমি বাংলাদেশের বাসিন্দাদের বলতে চাই, বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। নিউ এশিয়ান টাইগার হবে বাংলাদেশ।“
২০১৬ সালে দেশের মানুষের মাথা পিছু আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৪৬৬ ডলারে এবং বিগত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জনের হার প্রথমবারের মত ৭ শতাংশে উপরে উঠে আসে। দেশি ও বিদেশি বিনয়োগের পরিমাণ ছিল আশানুরূপ। দেশের ব্যাংক ও আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান থেকে স্বল্প সুদে ঋণ গ্রহণের সুযোগ থাকায় বেসরকারি খাতের সমৃদ্ধি ঘটেছে। এ সময়ে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল। কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা

গত জুনে (২০১৬) অর্থবিভাগ থেকে প্রকাশিত আগামী ৩ বছরের জন্য মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি-বিবৃতি শীর্ষক প্রতিবেদন দেখা গেছে, ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কর্মসংস্থানের জন্য ৬ দফা কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে -
১। পরিকল্পনাগুলো হলো আত্মকর্মসংস্থান ও ব্যক্তি উদ্যোগের স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশকে উৎসাহিত করে বেকারত্ব দূর করা।
২। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা।
৩। বিদেশের শ্রমবাজারকে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য উপযোগী করা।
৪। প্রয়োজনে কূটনৈতিক তত্পরতা বাড়ানো।
৫। বিভিন্ন দেশে নতুন নতুন দূতাবাস খোলা এবং
৬। সরকারি খাতে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের পেশাগত উৎকর্ষ সাধনে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া।
বর্তমান প্রতিষ্ঠানগুলোর আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রতিবন্ধী ও নারীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। অর্থের জোগান সহজ করতে সরকার জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিল গঠনের পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতে শিল্পোদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সক্রিয় সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব ছাড়া শুধু সরকারি উদ্যোগ এ ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত ফল নিয়ে আসতে পারবে না। শিল্পে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি নিশ্চিত করতে দেশিবিদেশি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের জন্য পণ্যের বৈচিত্র্য এবং বাজার সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে, উন্নয়ন সহযোগীরা ভবিষ্যতেও দক্ষতা উন্নয়ন, নিয়োগযোগ্যতা বৃদ্ধি ও শোভন কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।

ব্যবসা-বানিজ্য ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ
কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নতুন উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণ, মূলধন ব্যয় কমানো, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ সব বিষয়ে নিরলসভাবে কাজ করছে সরকার। দেশে বিনিয়গের পরিবেশ আগের তুলনায় ভালো হয়েছে বলতে হবে। গত বছর বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের হার ছিল গত কয়েক বছরের মধ্যে সব থেকে বেশি। গত বছর ২ বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে, নতুন সংযোগ দেওয়া দ্রুততর হয়েছে। উদ্যক্তাদের জন্য ঋণের উপর সুদ হার কমানো হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ডুয়িং বিসনেস (২০১৬) ও বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বিষয়ে প্রতিবেদনে (২০১৭) বাংলাদেশের অবস্থান স্থিতিশীল ছিল। বাংলাদেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগের আঞ্চলিক কেন্দ্র হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েনচাই ঝাং।
ঋণ কার্যক্রম
২০১৬ সালের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) সময়ে মোট এক লাখ ৭ হাজারের বেশি নতুন উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব উদ্যোক্তাদের মাঝে ১ লাখ ১ হাজার ১৯২ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১১ হাজার নতুন নারী উদ্যোক্তা ৭৮৫ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছেন। স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন (এলজিআরডি) ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীন পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশন (পিডিবিএফ) দেশের ৫২ টি জেলার ৪০৩টি উপজেলায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মাঝে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ ও আদায় কার্যক্রমের মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ লাখ মানুষকে স্বাবলম্বী করেছে। চলতি অর্থবছরে পিডিবিএফ ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের পরিকল্পনা নিয়েছে। 
সামাজিক নিরাপাত্তা কর্মসূচি
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসুচির আওতায় গ্রামীণ জনগণের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে সরকার বিগত অর্থ বছরে ১৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল। ২০২০ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের হার ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে নেওয়া বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে ২০১১ সালে এক হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে বাড়িয়ে ৮ হাজার ১০ কোটি টাকা করে তৃতীয়বারের মতো একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের পরিধি আরো বিস্তৃত করে এখন দেশের ৬৪ জেলার ৪৯০ উপজেলার চার হাজার ৫৫০টি ইউনিয়নের ৪০ হাজার ৯৫০টি ওয়ার্ড নির্ধারণ করা হয়েছে। যুব সম্প্রদায়ের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন ৬৪ উপজেলায় ন্যাশনাল সার্ভিস প্রোগ্রাম সম্প্রসারিত হতে যাচ্ছে। দরিদ্র প্রবন ৬৪ উপজেলায় ন্যাশনাল সার্ভিস প্রোগ্রাম ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম পর্যায়ে সম্প্রসারিত হবে। এর আওতায় ২০১৭ সালের মে মাস থেকে শিক্ষিত বেকার যুবকদের ৩ মাসের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে এবং প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থী দৈনিক ১শ’ টাকা করে ভাতা পাবেন।
গ্রামীণ নারীদের কর্মমুখী প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ২৩৭ কোটি ব্যয় ধরে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে বাস্তবায়িত হতে যাওয়া এই প্রকল্পটি মেয়াদ ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। গ্রামীণ নারীরা এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ পাবে।


অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা
এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি ও দেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের পর্যায়ে উন্নীত করার প্রচেষ্টায় মোট ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে সরকারী ও বেসরকারীভাবে অনুমোদিত মোট ৩৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে। এ ছাড়া অনুমোদনের অপেক্ষায় অন্তত আরও ৩১টি অর্থনৈতিক অঞ্চল। 
কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ
সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগ মিলিয়ে ৪০টির বেশি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের কারিগরি দক্ষতা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ পরিচালনার সাথে যুক্ত আছে। পাবলিক খাতের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকার বেসরকারি এবং এনজিও পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্থিক এবং অন্যান্য পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সংস্কারের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন ও নিয়োগযোগ্যতা বৃদ্ধিতে সরকার বিভিন্ন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ২০১০ সাল থেকে স্কিল এন্ড ট্রেনিং এনহান্সমেন্ট প্রজেক্ট (এসটিইপি) বাস্তবায়ন করে চলেছে। সরকারি এবং বেসরকারিসহ সবধরনের কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে প্রশিক্ষণের মান উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এছাড়া প্রশিক্ষণের মান দেশীয় এবং অন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য, বাজারমুখী এবং সবার জন্য সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট এন্ড প্রোডাক্টিভিটি প্রকপ্ল (বি-এসইপি) হাতে নেয় যা ২০১৮ সাল পর্যন্ত চলবে। এছাড়াও এডিবি ২০১৪ সাল থেকে বেসরকারি খাতের চাহিদা মাথায় রেখে দক্ষতা উন্নয়ন লক্ষ নির্ধারণ করে প্রশিক্ষণ স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম পরিচালনা করে আসছে।
তথ্যপ্রযুক্তি খাত

তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন সেবা একটি বিকাশমান খাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশের তরুণ প্রজন্ম বেশ আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে এসেছে। বর্তমানে ৮০০ এর উপরে নিবন্ধিত তথ্যপ্রযুক্তি ও সফটওয়ার প্রতিষ্ঠান কাজ করছে এবং ৩০ হাজারের বেশি তরুণ সংশ্লিষ্ট পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। সরকার তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশ তরান্বিত করতে নানা ধরনের কর্মসূচি ও প্রণোদনার ব্যবস্থা রেখেছে। দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির লক্ষে সরকার এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের উপর জোর দিয়েছে। সরকারের আইসিটি বিভাগ পরিচালিত লেভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট এন্ড গভরনেন্স, লার্নিং এন্ড আরনিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টে থেকে দেশের তরুণদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং বা বিপিও খাতে ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিবছর ২ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ । প্রতি বছর দেশে ১০ হাজার কম্পিউটার সায়েন্স স্নাতক তৈরি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এদের মধ্যে অনেকেই গুগল, ফেইসবুক বা মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। এছাড়াও বর্তমানে নির্মাণাধীন হাইটেক পার্ক, আই টি ভিলেজ এবং সফটওয়ার টেকনোলজি পার্কের কার্যক্রম শুরু হলে লক্ষাধিক তরুণের কর্মসংস্থান হবে।
বৈদেশিক শ্রমবাজার
সরকারে নেওয়া কার্যকর উদ্যোগের ফলে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে মধ্য ডিসেম্বরে রেকর্ড ৭.২ লাখ কর্মী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে। অভিবাসন ব্যবস্থাপানার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন আইনী পদক্ষেপ নিয়েছে যেগুলো দেশে এবং বহিঃবিশ্বে ব্যাপক ভাবে প্রশংসিত হয়েছে। সরকার অভিবাসন ব্যবস্থা সহজ করার লক্ষে স্মার্ট কার্ড প্রবর্তন, বিদেশ থেকে সহজে অর্থ প্রেরণ, শ্রম বাজার গবেষণা সেল গঠন, দক্ষ ও আধা-দক্ষ কর্মী সৃষ্টির জন্য প্রশিক্ষণ এবং অভিবাসিদের জন্য স্বাস্থ্য সুবিধা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। সরকার নিয়োগদানকারী সংস্থাদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনা এবং অভিবাসন খরচ কমাতে সরকার ‘ওভারসীস এমপ্লয়মেন্ট এন্ড মাইগ্রেশন ল ২০১৩’ চালু করে।
প্রতিবছর একটি বড় জনগোষ্ঠী দেশের শ্রমবাজারে প্রবেশ করে, তাদের জন্য উন্নত ও সম্মানজনক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাবে সরকার। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সমীক্ষা অনুযায়ী, কোনো দেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ হলে নতুন করে আড়াই লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়। আগামী অর্থবছর প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার সেই হিসাবে, আগামী অর্থবছরে প্রায় ১৮ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হওয়ার কথা। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার রূপকল্প-২০২১ সামনে রেখে অগ্রসর হচ্ছে। বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ পেরিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধ, সুখী এবং উন্নত জনপদে পরিণত করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।